আজগর সালেহী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
ক্রিকেট তার নেশা, ক্রিকেটই তার ধ্যান। ঘুমে-জাগরণে, মন-মননে যার শুধু খেলার ছোঁয়া—তার নাম মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নের সিংহরিয়া গ্রামের সন্তান তিনি। জন্ম ১৯৯৩ সালের ১ জুলাই। পিতা মোহাম্মদ ফজলুল করিম, মাতা হালিমা বেগম। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ।
ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রতি ছিল দুর্মর ভালোবাসা। তবে ক্রিকেটই ছিল তার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের খেলা।
শৈশবের সেই ভালোবাসাই তাকে টেনে এনেছে মাঠে। নিজ গ্রাম সিংহরিয়া ছাড়িয়ে ফটিকছড়ি ও আশপাশের এলাকায় বহু ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও একাগ্রতা, পরিশ্রম ও প্রতিভায় বহু টুর্নামেন্টে অর্জন করেছেন চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। বিশেষ করে ২০২৫ সালে একটি বৃহৎ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই ছিল তার ক্রীড়া ক্যারিয়ারের অন্যতম বড় অর্জন।
২০১৯ সালে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলেন স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠন “কামাল ভাইকিংস”। শুরুতে এটি ছিল শুধুই বন্ধুপ্রিয় একটি দল। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে দলটি নিয়মিত ও সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ও আয়োজন শুরু করে। আজ কামাল ভাইকিংস শুধুই একটি ক্লাব নয়, বরং ফটিকছড়ির ক্রীড়াঙ্গনে ‘চ্যাম্পিয়নের নাম’ হিসেবেই পরিচিত।
২০২৫ সালে ইনশাআল্লাহ, নিজ উদ্যোগে এক জমকালো মিনি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঘোষণাও দিয়েছেন কামাল।
ক্রিকেটে কামালের প্রেরণা বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আর ফুটবলে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার জুনিয়র। তাদের মতোই একসময় কামালেরও স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলের হয়ে খেলার। যদিও বাস্তবতার কঠিন বাঁকে সে স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে, তবে ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে, প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কিংবা সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই কামাল উদ্দিন আজ একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক ও জনপ্রিয় খেলোয়াড়। যারা তাকে কাছ থেকে চেনেন, তারা বলেন— “ক্রিকেট ছাড়া কামাল কিছুই বোঝে না।”
কামালের স্বপ্ন, ফটিকছড়ি তথা উত্তর চট্টগ্রামের খেলাধুলাকে এগিয়ে নেওয়া। নিজের প্রচেষ্টায় স্থানীয় প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সামনে তুলে ধরার কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। যদি জেলা বা জাতীয় পর্যায়ে উপযুক্ত সুযোগ ও সহায়তা পেতেন, তাহলে হয়তো আরও অনেক দূর যেতে পারতেন।
তবুও তিনি থেমে যাননি। এগিয়ে চলেছেন আপন আলোয়, আপন ছন্দে।
আজ তার ঘর যেন ক্রেস্ট ও মেডেলের শো-রুম। তার দল “কামাল ভাইকিংস” যেখানেই অংশ নিয়েছে, সেখানেই চ্যাম্পিয়নের ট্রফি ঘরে এনেছে। পরাজয়ের রেকর্ড খুবই কম।
নিজ টিমের সব খেলোয়াড়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কামাল বলেন—“ওরাই আমার অনুপ্রেরণা। ওদের কারণেই আজ এই পর্যন্ত আসা সম্ভব হয়েছে।”
ক্রিকেটপ্রেমী এই তরুণের কাছে ক্রিকেটই জীবন। তার স্বপ্ন, সম্ভাবনা, সফলতা ও জনপ্রিয়তা আজ ফটিকছড়ির তরুণ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা। সবার কাছে তার চাওয়া—
“আমি যেন খেলাধুলার মাধ্যমে সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করতে পারি, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।