২৬শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১লা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

পাবনার ঈশ্বরদীতে স্কুল, কলেজ বহুতল আবাসিক ভবন,মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপন ঝুঁকিতে

রিফাজ বিশ্বাস লালন, ঈশ্বরদী প্রতিনিধি:

ঈশ্বরদী ঘন বসতি এলাকা। বহুতল আবাসিক ভবন, বহুতল বাণিজ্যিক মার্কেট সহ স্কুল কলেজ কোন কিছুতে নেই অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র, দুর্যোগ মোকাবেলায় নিরাপদে বের হয়ে যাবে এমন কোন ব্যবস্থা নেই। দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। বহুতল আবাসিক ভবন এবং বাণিজ্যিক মার্কেটে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ছাড়াই চলছে কার্যক্রম।আমরা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে লক্ষ্য করে দেখি স্কুল, কলেজ, বহুতল ভবন মার্কেট গুলোতে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা সর্বপ্রথমে তারা নিয়ে থাকে।

পাবনার ঈশ্বরদীতে স্কুল, কলেজ বহুতল আবাসিক ভবন,মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপন ঝুঁকিতে।

এ বিষয়ে আমরা জানতে চেয়েছিলাম ঈশ্বরদী শহীদ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ঈশ্বরদী শাখার পরিচালক আজিম খাঁনের কাছে সে আমাদেরকে জানান আমাদের প্রায় ৫০০ ছাত্র/ ছাত্রী, প্রথম তলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ক্লাস চলে,৪র্থ তলায় আবাসিক,কিন্তু কোন অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র বা (emergency exit) ইমার্জেন্সি গেট নেই। আমরা দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিব। আমরা আরো একটি সনামধন্য স্কুল ঈশ্বরদী শহরে অবস্থিত সকাল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক মহিদুল ইসলাম বলেন আমাদের এখানে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র নেই,কিন্তু পর্যাপ্ত পানি,বালু,খোলা জাইগা বা মাঠ (emergency exit) খোলা আছে। আমরা দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেব।

আমরা এই বিষয়ে আরেকটি কিন্ডারগার্ডেন সানফ্লাওয়ার এর পরিচালক এনামুল হকের এর কাছে জানতে চেয়েছিলাম সে বলেন আমাদের কাছে অগ্নি নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই,আমি স্কুল ব্লিডিং তৈরির আগে ফাঁয়ার সার্ভিসের অফিসে গিয়েছিলাম কিন্তু জটিলতার কারনে অগ্নি নির্বাপনের কোন ব্যাবস্থা নিতে পারি নাই।আমার স্কুলে প্রায় ২৩০জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। আমরা দ্রুত অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা নিব।

ঈশ্বরদী শাহীন ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক রাজিব হোসেন জানান আমাদের স্কুলের তেমন কোন অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র নেই বা( emergency exit) গেট নেই। নিচ থেকে দোতলা পর্যন্ত আমাদের আড়াইশো ছাত্র/ছাত্রী নিয়ে ক্লাস চলছে, সে জানান দ্রুত আমরা অগ্নি নির্বাপনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এরপর আমরা জানতে চেয়েছিলাম ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী সরকারী সাঁরা মাড়োয়ারি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রকিব সাহেবের কাছে সে জানান সরকারিভাবে কোন নির্দেশনা আসেনি বা আমাদের কাছে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র নেই। স্কুল প্রাঙ্গণে খোলা জায়গা আছে এবং বহিরাগমন বা (emergency exit) গেট অনেক আছে। কলেজ ক্যাম্পাসে নেই। এ ব্যাপারে যদি সরকার থেকে কোন নির্দেশনা আসে তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এরপর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সোলায়মান হোসেন বলেন আমার জানামতে ঈশ্বরদীতে ৪২ টা স্কুলের কোনটিতেই অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র নেই বা জরুরী অবস্থাতে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এ ব্যবস্থা নেই। সরকার থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি আসলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিসের ইনেসপেক্টর মীর আমিরুল ইসলাম বলেন ঈশ্বরদী তে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও কিন্ডারগার্টেন এ মহড়া ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।

কিছু দিন আগে ইস্তা প্রাইমারি স্কুলে মহড়া করা হয়েছে। আমরা প্রশিক্ষণ প্রদান করতে বদ্ধ পরিকর কিন্তু উপযুক্ত সহোযোগিতার অভাবে তা সবসময় সম্ভব হয় না। ব্যাক্তি পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে না পারলে সাসটেইনেবলিটি তৈরি করা সম্ভব নয়।

ঈশ্বরদীর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান,স্কুল, কলেজ, দোকান, মার্কেট, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আবাসিক ভবন অগ্নি দূর্ঘটনায় নিরাপদ নয়। তাদের অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে নূন্যতম ব্যাবস্তা নেই।
আমরা সবসময় আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।

তিনি এ বিষয়ে আরো কিছু নির্দেশনা দেন, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হলে, বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার। প্রথমে স্কুলের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়মিত পরীক্ষা ও মেরামত করতে হবে। এরপর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অগ্নি নির্বাপন বিষয়ের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেই সাথে স্কুলের অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র গুলো সব সময় ব্যবহার উপযোগী রাখতে হবে।  এছাড়া, অগ্নি নির্বাপণের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং তা নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) সরবরাহ করতে হবে এবং এগুলো সহজে দৃশ্যমান ও প্রবেশগম্য স্থানে রাখতে হবে।

আগুন লাগলে করণীয় কী এবং কিভাবে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় সেটা জানতে হবে এবং জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য সচেতন থাকতে হবে। এবং অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। জরুরী বহির্গমন পথ স্কুলের প্রতিটি ফ্লোর থেকে নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত এবং সুস্পষ্ট বহির্গমন পথ (emergency exit) থাকতে হবে। এই পথগুলো সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং এগুলো ব্যবহারের জন্য নিয়মিত মহড়া দিতে হবে। বৈদ্যুতিক তারের ত্রুটি, অতিরিক্ত লোড এবং শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে, তাই বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং ত্রুটিপূর্ণ সরঞ্জাম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। স্কুলের রান্নাঘরে আগুন লাগার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই রান্নাঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাসের চুলা ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং রান্নাঘর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।  এছাড়া মহড়ার মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অগ্নি নির্বাপণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে পারবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে তারা মোকাবেলা করতে পারবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন ঈশ্বরদীতে বহতল আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক মার্কেট, স্কুল, কলেজ আছে, জানামতে কোন অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র পর্যাপ্ত নেই। আমরা দ্রুত স্কুল,এবং কলেজ গুলোতে পদক্ষেপ নিব, এবং ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিসের ইন্সপেক্টর কে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চিঠি দিব। এবং তারা যেন স্কুল এবং কলেজগুলোতে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে যেন জরুরী অবস্থাতে তারা নিজেকে রক্ষা করতে পারে। এবং সরকারিভাবে যদি কোন নির্দেশনা আসে আমরা অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top