নিজস্ব প্রতিনিধি:
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পথ প্রশস্ত করতে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার দেওয়া বিতর্কিত রায়গুলো বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে দলীয়করণের প্রক্রিয়া শুরু করেন। সিনিয়র ও যোগ্য বিচারকদের ডিঙিয়ে দলীয় আনুগত্যশীলদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি হিসেবে খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন, যা পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকারের জন্য ‘বিনা ভোটের নির্বাচন’ (২০১৪), ‘নিশিরাতের ভোট’ (২০১৮) এবং ‘ডামি নির্বাচন’ (২০২৪) করার পথ সুগম করে।
খায়রুল হকের সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল ২০১১ সালের ১০ মে ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ এবং ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত লিখিত আদেশে পরস্পরবিরোধী রায় প্রদান। সংক্ষিপ্ত আদেশে আগামী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা বলা হলেও চূড়ান্ত রায়ে তা পরিবর্তন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এই রায় নিয়ে আপিল বিভাগের তিন বিচারপতি – ওয়াহাব মিয়া, নাজমুন আরা সুলতানা এবং ইমান আলী প্রকাশ্যে ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা এই রায়কে ‘বিচারদর্শনের গুরুতর লঙ্ঘন’ এবং ‘নজিরবিহীন বিচ্যুতি’ হিসেবে অভিহিত করেন।
খায়রুল হকের অন্যান্য বিতর্কিত রায়ের মধ্যে রয়েছে:
– ফতোয়া অবৈধ ঘোষণা
– মুজিব হত্যা মামলার রায়
– সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল
– জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক না বলে রায়
বর্তমানে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের আদেশ দিলেও, খায়রুল হকের রায়ের কারণে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা নিয়ে আইনবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সততা রক্ষায় এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।