নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরির সম্পদ অর্জনের গল্প রূপকথার মতোই অবিশ্বাস্য। মাত্র ১৪ বছরে এই আওয়ামী লীগ নেত্রী একজন সহকারী শিক্ষিকা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিকে পরিণত হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে এসেছে, তার ৩৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ হাজার ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার লেনদেন এবং ১৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার মানিলন্ডারিংয়ের প্রমাণ মিলেছে।
২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জের একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন নিয়ে কর্মজীবন শুরু করা হেনরি বর্তমানে ১৬টি বিলাসবহুল গাড়ি, ঢাকা ও সিরাজগঞ্জে একাধিক ফ্ল্যাট এবং বিঘার পর বিঘা জমির মালিক। দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, তিনি তার সম্পদের প্রকৃত মূল্য গোপন করে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
হেনরির সম্পদের তালিকায় রয়েছে:
– সিরাজগঞ্জে ৭ তলা ভবন (দলিলমূল্য ২.২২ কোটি টাকা)
– মিরপুরে ২টি ফ্ল্যাট (৫০ লাখ টাকা)
– সিরাজগঞ্জের বাহুকা এলাকায় ৪ হাজার বর্গফুটের ২ তলা ভবন (১.৩০ কোটি টাকা)
– নারায়ণগঞ্জ ও পটুয়াখালীতে শতাধিক কাঠা জমি
– সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫ একর জমি
২০০৮ সালে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর হেনরি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর থেকেই তার সম্পদ বাড়ার গতি কয়েকশ গুণ বেড়ে যায়। হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার থেকে হেনরি ও তার স্বামী শামীম তালুকদার লাবুকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। আদালত তাদের সম্পদ হস্তান্তর রোধে রিসিভার নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেনরি দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে এই সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তার ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার সম্পদ আয়কর রিটার্নে উল্লেখ নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, হেনরির এই সম্পদ গড়ার কাহিনী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালীদের কীভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তার একটি জীবন্ত উদাহরণ।