২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সাজিদের মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার দাবিতে ইবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি

ওবাইদুল্লাহ আল মাহবুব, ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ’র রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং ক্যাম্পাসে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১ টা থেকে আল কুরআন বিভাগের আহ্বানে ক্যাম্পাসের বটতলায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। বটতলা থেকে মিছিল বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশের আশ্বাস পেয়ে দুপুর দেড়টায় মাঠ ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা।

মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ; আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না; আমার ভাই কবরে, খুনী কেন বাহিরে; ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে; প্রশাসনের মানি না, মানবো না; পুকুরে লাশ ভাসে, প্রশাসন কী করে; বিচার বিচার বিচার চাই, সাজিদ হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

অবস্থান কর্মসূচিতে থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন ড. আ.ব.ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, আল কুরআন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন মিঝি, অধ্যাপক ড. মোহা. জালাল উদ্দিন, বিভাগের শিক্ষার্থীরা-সহ সকল ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, সাজিদ হত্যার তদন্তের বিষয়ে যে অগ্রগতি হবার কথা ছিল সেটা দৃশ্যমান হয়নি। দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছয় দিন সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তদন্ত কাজের কোন গাফিলতি না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।

ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ গালিব বলেন, যে প্রশাসন এতদিন মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি সেই প্রশাসনকে মৃত ঘোষণা করা হবে।

তালাবায়ে আরাবিয়া ইবি শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান, এতদিন হয়ে গেল, কেন গড়িমসি করা হচ্ছে? কারা তদন্তে বাঁধা দিচ্ছে তা দেখিয়ে দিন।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের শাখা সভাপতি মুহা. মাহমুদুল হাসান বলেন, আল কুরআন বিভাগ পরীক্ষা বর্জন করে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বের করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময় ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাস সংস্কারের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিল কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি। যদি শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট না বুঝেন বা শিক্ষার্থীদের কাতারে না আসেন এবং আপনারা যদি বিপ্লবী প্রশাসনের ভূমিকা রাখতে না পারেন আল্লাহর ওয়াস্তে নেমে যান।

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি- সাজিদ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করুন। তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে সেটার দ্রুত রিপোর্ট পেশ করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কতক্ষণের মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশ করবে তা স্পষ্ট করুন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখবো। আন্দোলনের সময় কেউ শিক্ষকদের গায়ে হাত না দেয় এবং বিশৃঙ্খলা না করতে পারে সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের জানা আছে, একটা গ্রুপ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। যদি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে তাহলে এর দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখা সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, সাজিদ হত্যার ৯ দিন হয়ে গেছে কিন্তু এখনও কোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করেননি প্রশাসন। জুলাইয়ের পরেও জনগণ বা শিক্ষার্থীদের ম্যানডেট না বুঝেন তাহলে আগের নজিরের ব্যত্যয় হবে না এবং আপনাদের নেমে যেতে বাধ্য করা হবে। দ্রুত রিপোর্ট পেশ করে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন, অন্যথায় পালানোর পথ পাবেন না।

আল কুরআন বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী আমাদের কাছে আমানত। প্রশাসনকে৷ বলবো- আপনারা ছাত্রদের কাতারে চলে আসুন। তাহলে আপানারা সুন্দর থাকবেন এবং ক্যাম্পাসও সুষ্ঠু থাকবে।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝি বলেন, আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রথম থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ করছি- একদল ষড়যন্ত্রকারী সাজিদের লাশ নিয়ে বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। আমাদের বিভাগের নেতৃত্বে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে হলেও প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করাবো ইনশাআল্লাহ। আমি প্রশাসনকে বলব- আপনারা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখালে পরিণত ভয়াবহ হবে।

রুটিন ভিসির দায়িত্বে থাকা প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবস সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। ছুটির দিন বাদে ৫ দিন কার্যদিবস পেয়েছে তদন্ত কমিটি। আশা করছি- ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পেলে চলতি সাপ্তাহের মঙ্গল/বুধবারের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারবো।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top