নিজস্ব প্রতিনিধি:
গণভবনের সম্পূর্ণ জমি ও স্থাপনা এখন ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’-এর জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে গেছে। ৯৯ বছরের লিজ দলিল সম্পন্ন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আগামী ৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এই জাদুঘরের উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণ ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এই গণভবনেই একসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বসবাস করতেন, যিনি গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করেছিলেন। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়। তবে নকশা অনুমোদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সাত মাস বিলম্বের পর ৮ জুলাই চূড়ান্ত নকশা পাস হয়।
সময় সংকটের কারণে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ওটিএম) দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১১১ কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে জাদুঘর নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি এই বরাদ্দ অনুমোদন করে। বর্তমানে গণভবন প্রাঙ্গণে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো রাতদিন কাজ করছে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে জমি হস্তান্তরের জন্য গত ২২ জুলাই তেজগাঁও সাবরেজিস্ট্রি অফিসে লিজ দলিল সম্পাদন করা হয়। দলিলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান যথাক্রমে দাতা ও গ্রহীতা হিসাবে স্বাক্ষর করেন। তেজগাঁও মৌজার ‘বি’ সেক্টরে অবস্থিত এই জমির মোট আয়তন ১৭.৪৬৭৯ একর।
লিজের শর্তানুযায়ী, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে প্রতি বছর তিন হাজার টাকা খাজনা দিতে হবে। এছাড়া গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া জমি বা স্থাপনার কোনো রকম পরিবর্তন করা যাবে না। আইনি জটিলতা এড়াতেই মূলত এই লিজ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জাদুঘরটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস, আন্দোলনের রক্তাক্ত দিনগুলোর চিত্র, শেখ হাসিনার সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলের নথি এবং গণ-অভ্যুত্থানের সময়ের বিভিন্ন স্মারক এখানে সংরক্ষণ করা হবে। স্থিরচিত্র, ভিডিও ডকুমেন্টরি, শহীদদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, সংবাদপত্রের ক্লিপিং এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন দিয়ে সাজানো হবে গ্যালারিগুলো। বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলা হবে শেখ হাসিনার পলায়নের দৃশ্যও।
এই জাদুঘরটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি শাখা হিসাবে পরিচালিত হবে এবং ৫ আগস্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।