৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পথে যুক্তরাজ্য: প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের পরিকল্পনা ঘোষণার অপেক্ষা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার শিগগিরই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন বলে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস সূত্রে জানা গেছে। ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার অন্তত সাতজন সদস্য নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি পূরণে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য স্টারমারকে জোরালো চাপ প্রয়োগ করছেন। লেবার পার্টি গত জুলাই মাসে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার সময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টি তাদের এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল, যদিও কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করা হয়নি।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ইস্যুটি আরও গরমিয়ে উঠেছে, কারণ লেবার পার্টির প্রায় ১৩০ জন ব্যাকবেঞ্চ এমপি – যা সংসদীয় দলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ – ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র দ্য টাইমসকে জানিয়েছেন, স্টারমার বর্তমানে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন যা দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের ‘নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের অবিচ্ছেদ্য অধিকার’কে স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে।

এদিকে, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ২২০ জনের বেশি সংসদ সদস্য – যাদের মধ্যে লেবার পার্টির সদস্যরাও রয়েছেন – প্রধানমন্ত্রীকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির বিষয়ে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। নয়টি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের এমপিদের স্বাক্ষরিত একটি যৌথ চিঠিতে তারা আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের সম্মেলনে এই স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য স্টারমারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। ২৮ ও ২৯ জুলাই ফ্রান্স ও সৌদি আরবের সহ-সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনকে তারা এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ঘোষণার জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমপিরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে যদিও যুক্তরাজ্যের একার পক্ষে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়, তবুও ব্রিটিশ স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা বয়ে আনবে। তারা ব্রিটেনের ঐতিহাসিক দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বিশেষ করে ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনে ব্রিটেনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে। তাদের মতে, এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া যুক্তরাজ্যের নৈতিক দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।

এই চিঠিতে কনজারভেটিভ পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি এবং ওয়েলসের প্লাইড কামরিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করেছেন। এই উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের অবস্থানকে আরও সুস্পষ্ট করতে সহায়তা করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের জন্য একটি কঠিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে যখন তার নিজ দলের অভ্যন্তর থেকেই এই বিষয়ে চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী দিনগুলোতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top