৩১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৬ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বছরে দুবার ফোটা কৃষ্ণচূড়া: সিকৃবির এক নিঃশব্দ বিস্ময়

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শহীদ জিয়া হলের প্রাঙ্গণে সুউচ্চ কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো বছরে দুবার ফুল ফুটিয়ে ক্যাম্পাসের শোভা বাড়াচ্ছে। অন্য কৃষ্ণচূড়া গাছ যেখানে বছরে একবার ফোটে, সেখানে জিয়া হলের এই গাছগুলো ব্যতিক্রমীভাবে দুবার ফুল দিয়ে ক্যাম্পাসে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সবুজে ঘেরা এই পরিবেশে হাজারো রঙিন গল্পের মাঝে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা যেন নিজেই একটি বিশেষ গল্প ফুটিয়ে তুলছে। এটি বারবার প্রকৃতিকে এবং ক্যাম্পাসের উদ্যমী শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।

সকালে ঘুম ভেঙে জিয়া হল ও তার পাশে শাহজালাল হলের বারান্দায় দাঁড়ালেই চোখে পড়ে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম সৌন্দর্য। দুপুরবেলা সূর্যের আলো যখন পাতায় পড়ে, তখন মনে হয় পাতাগুলো হাসছে আর নাচছে—এক অপরূপ দৃশ্য! হলের নিচতলা থেকে চারতলার ছাদ পর্যন্ত গাছগুলো নিজেদের ছড়িয়ে দিয়েছে, যেন এক অবিরাম ভালোবাসার প্রকাশ।

প্রথম দফায় ফুল ফোটে মার্চ-এপ্রিলের গ্রীষ্মের শুরু ও মাঝামাঝিতে। তখন গাছের পাতা ঝরে যায় এবং তার জায়গা জুড়ে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া ফুলে যেন আগুনের মতো জ্বলে ওঠে পুরো জিয়া হল এলাকা। এই আগুন যেন প্রকৃতির ভালোবাসার ভাষা ছড়িয়ে দিচ্ছে। যখন সবাই ভাবে গাছটি বিশ্রামে যাবে, তখনই ঘটে আরেক বিস্ময়—জুন-জুলাইয়ে দ্বিতীয় দফায় আবার ফুল ফোটে।

সেই সময় ক্যাম্পাসে একধরনের নীরবতা, ক্লান্ত বিকেল আর আসন্ন শরতের আভাস থাকে। আর এই নীরবতার মাঝেই কৃষ্ণচূড়ার আগুনঝরা রঙ যেন বলে ওঠে, “শুভ হোক সিকৃবির প্রতিটি দিন।”
জিয়া হলের এক নবীন শিক্ষার্থী বলেন, “হল পাড়ায় প্রবেশ করেই আমি বিশাল কৃষ্ণচূড়া দেখে বিস্মিত হয়েছি। এখন কৃষ্ণচূড়া ফোটার সময় না, তবুও পুরো হল প্রাঙ্গণ ফুলে ও গাছে ঢেকে গেছে। হলে প্রবেশ করার পূর্বেই রক্তিম কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো মন রাঙিয়ে দেয়।”

সাধারণত কৃষ্ণচূড়া গাছ বছরে একবারই ফুল দেয়, তবে এই বিশেষ গাছটি যেন এক ব্যতিক্রম। কেউ বলেন এটি মাটির গুণ, আবার কেউ বলেন গাছটির জাত আলাদা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মান্না সালওয়া বলেন, “কৃষ্ণচূড়া ফুল সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ফোটে। অনেক গাছে জুলাই-আগস্ট মাসেও ফুল দেখা যায়।

কোনো কোনো গাছ এক বছরে দুইবার ফুল দিতে পারে। বিষয়টি আসলে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে অথবা গাছ কোনো কারণে হঠাৎ শারীরিকভাবে আঘাত (ইংরেজিতে স্ট্রেস-Stress) পেলে হতে পারে। বাংলাদেশ ক্রান্তীয় জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এখানে গ্রীষ্মকালে গরম ও বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।

কৃষ্ণচূড়া ফুল গ্রীষ্মকালে ফুটলেও আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘ সময় খরা বা শুষ্কতা থাকার পর আকস্মিক প্রচুর বৃষ্টি হলে গাছ শক পায় এবং ফুল দিতে পারে। সিলেট অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে প্রচুর গরম ও বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়। দীর্ঘ সময় খরা বা শুষ্কতা থাকার পর আকস্মিক বৃষ্টি সিলেটের পরিচিত আবহাওয়া। এ অঞ্চলে কৃষ্ণচূড়া গাছে বছরে দুইবার ফুল দেওয়ার এটি একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।”
সিকৃবির জিয়া হলের কৃষ্ণচূড়া এখন শুধু গাছ নয়, হয়ে উঠেছে এক প্রতীক—নতুনের বন্ধু, স্মৃতির ছায়া, এবং রঙিন ছাত্রজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

লেখক : আদিব হাসান প্রান্ত
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top