নিজস্ব প্রতিনিধি:
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তার সাক্ষাতের বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, এটি ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। বৃহস্পতিবার সিরডাপ মিলনায়তনে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি বলেন, “এক কফিশপে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ঘটনাটি ঘটেছে, তবে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক বা আলোচনা হয়নি। আমি তখন বিভিন্ন বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম।”
এই বক্তব্য আসে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, যিনি দাবি করেছিলেন নুরকে ইসরায়েলি নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকের পরিণতি থেকে “রেসকিউ” করতে হয়েছিল। কলিমুল্লাহ জানান, সাফাদি একজন দ্রুজ মুসলিম (পরবর্তীতে সংশোধন করে বলা হয় দ্রুজ আলাদা ধর্মগোষ্ঠী) এবং দুজন মুসলমানের মধ্যে কফি পান করায় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
২০২৩ সালে কাতারে নুর ও সাফাদির এই সাক্ষাৎ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে তখন জানানো হয়েছিল, কাতার, দুবাই ও ভারতে তোলা তাদের কিছু ছবি গোয়েন্দা সংস্থার হস্তগত হয়েছে। নুর এই অভিযোগগুলোকে “ষড়যন্ত্র” ও তার দলকে দুর্বল করার চেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে কলিমুল্লাহ ১৯৭১ সালের একটি অজানা তথ্য উন্মোচন করেন: “খন্দকার মুশতাক আহমেদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে সৈয়দ নজরুল ইসলামের নির্দেশে ইসরায়েলকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। ইসরায়েল আগ্রহ প্রকাশ করলেও ভারতীয় প্রতিবন্ধকতায় তা বাস্তবায়িত হয়নি।” তিনি আরও জানান, ১৯৭২ সালে ইসরায়েল পুনরায় স্বীকৃতির প্রস্তাব দিলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ট্যাবুর কারণে সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।
মেন্দি সাফাদি, যিনি ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সদস্য এবং সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসির প্রধান, বাংলাদেশে আগে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন বলে জানা যায়। এই সংযোগগুলো ইসরায়েল-বাংলাদেশ সম্পর্কের জটিল ইতিহাসের নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে যখন ২০২১ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থেকে “ইসরায়েল ভ্রমণ নিষিদ্ধ” লেখা অপসারণ করা হয়েছিল।
এই ঘটনায় নুরের রাজনৈতিক অবস্থান কিছুটা দুর্বল হলেও, তিনি তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, বিদেশ সফরে অনেকের সঙ্গে সাধারণ সাক্ষাৎ হতে পারে, যা থেকে রাজনৈতিক অর্থ বের করা উচিত নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির এই সংবেদনশীল ইস্যুটি এখনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।