৩রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

নুসরাত হত্যা মামলায় নতুন প্রশ্ন: আত্মহত্যাকে হত্যা প্রমাণের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে সাজিয়ে আদালতে উপস্থাপনের অভিযোগ করা হচ্ছে। এই মামলায় ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও এখন নতুন করে তদন্তের দাবি উঠছে।

২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার ছাদে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। চার দিন পর তার মৃত্যু হয়। মামলার তদন্তে পিবিআই দাবি করে এটি পরিকল্পিত হত্যা ছিল। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে বিচার শেষ করে আদালত ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

তবে সম্প্রতি প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আসামিদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন, নুসরাত আত্মহত্যা করেছিলেন। তাদের মতে, মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলায় জামিন মঞ্জুর হওয়ায় হতাশ হয়ে নুসরাত আত্মহত্যা করেছিলেন। আত্মহত্যার আগে তিনি এক শিক্ষককে এসএমএসে লিখেছিলেন, “স্যার, সিরাজ উদ-দৌলার জামিন হলে আমি আত্মহত্যা করব।”

আসামিদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, পিবিআই তদন্তে নিরপেক্ষতা বজায় রাখেনি। তারা দাবি করেন, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে, সাক্ষ্য প্রমাণ জালিয়াতি করা হয়েছে। স্থানীয় এক দোকানদার জানিয়েছেন, তদন্তে উল্লিখিত কেরোসিন তিনি কখনো বিক্রি করেননি। এছাড়া পুকুর থেকে উদ্ধার করা বোরকার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কেউ একজন আগে থেকে বোরকাটি পানিতে পুঁতে রেখেছিলেন।

মামলার এক সাক্ষী নুরুল আমিন বলেন, “আমি পিবিআইকে বলেছিলাম এটি নতুন বোরকা, কিন্তু তারা আমার কথা আমলে নেয়নি। তদন্তের নামে আমাকে মাসের পর মাস হাজিরা দিতে হয়েছে, এতে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।”

ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, “মামলাটি এখন হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সের জন্য রয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যদি নতুন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন, তবে আদালত তা বিবেচনা করবেন।”

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোস্তফা কামাল এবং তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহআলম মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অন্যদিকে মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান দাবি করেছেন, তারা আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছেন এবং আসামিপক্ষ থেকে হুমকি পাচ্ছেন।

এই মামলা নিয়ে দেশজুড়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ আদালতের রায়ই নির্ধারণ করবে এটি সত্যিকারের হত্যাকাণ্ড ছিল নাকি আত্মহত্যাকে হত্যা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top