আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতিরোধ আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে হামাসের অস্ত্র ত্যাগ ও শাসন শেষ করার আহ্বান জানানো হলে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। হামাসের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “ইসরাইলের দখলদারিত্বের অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিরোধ চলবে।”
জাতিসংঘের ‘দ্য নিউইয়র্ক ঘোষণাপত্রে’ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে শাসন ও অস্ত্র ত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছিল, যা সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স, মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ সমর্থন করেছে। হামাস এই ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি অবিচার।
এদিকে গাজায় মানবিক সংকট দিন দিন গভীর হচ্ছে। স্থানীয় চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি অনাহারে আরও দুই শিশু ও এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গাজায় অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৪ জনে, যার মধ্যে ৮৯ জনই শিশু। মার্চ থেকে ইসরাইলের কঠোর অবরোধের কারণে গাজাবাসী চরম খাদ্য ও ওষুধ সংকটে পড়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণকালে ১,৩৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
হামাস বিশ্বজুড়ে শুক্রবার, শনিবার ও রোববার যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু শুক্রবার সকালেই গাজায় ইসরাইলি হামলায় ৪২ জন নিহত হয়েছেন। ২২ মাসের এই সংঘাতে ইতিমধ্যে ৬০,৩৩২ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার গাজা সফর করেছেন। তিনি রাফা এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং গাজার মানবিক পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। উইটকফ জানিয়েছেন, তার এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে গাজার বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা, যাতে করে সেখানকার বেসামরিক জনগণের জন্য জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গাজা সংকটের স্থায়ী সমাধান এখনও দূরে। হামাসের সাম্প্রতিক ঘোষণা এবং ইসরাইলের ক্রমাগত সামরিক অভিযান ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাপ্তি শীঘ্রই ঘটছে না।