নিজস্ব প্রতিনিধি:
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ এক ঐতিহাসিক ভাষণে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ভিডিও বার্তায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা শুধু অতীত স্মরণ করছি না, একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা করছি – যেখানে কোনো নিপীড়নের স্থান থাকবে না।”
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, “১৬ বছরের স্বৈরশাসনে তরুণরা চাকরির বাজারে ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ও কোটা ব্যবস্থার শিকার হয়েছিল। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিচারব্যবস্থা পর্যন্ত মাফিয়াতন্ত্র কায়েম হয়েছিল।” তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই ছিল এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ, যখন ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
নৃশংস দমনপীড়নের চিত্র তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, “রাষ্ট্রযন্ত্র গুলিচালনা, ইন্টারনেট বন্ধ এবং হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ রেখে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করেছিল। বহু তরুণ চিরতরে দৃষ্টিশক্তি ও স্বাভাবিক জীবন হারিয়েছেন।”
জুলাই শহীদদের সম্মাননা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ৮৩৬ শহীদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫ পরিবারকে ইতিমধ্যে ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ১৩,৮০০ আহত যোদ্ধাকে ১৫৩ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি ৭৮ জনকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
ভবিষ্যতের রূপরেখা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “শহীদদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থক হবে যখন আমরা একটি সত্যিকারের জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়তে পারব। জুলাইয়ের চেতনায় একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক আমাদের সম্মিলিত শপথ।”
তিনি তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে জুলাই আন্দোলনের যোগসূত্র স্থাপন করে বলেন, “স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও আমরা যে সুবিচার ও গণতন্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম, জুলাই আন্দোলন সেই অসম্পূর্ণতা পূরণের সংগ্রাম ছিল।”
দেশজুড়ে জেলা প্রশাসনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রচারিত এই ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, জুলাই শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।