১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাষণ: ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ও গণতন্ত্রের অঙ্গীকার

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে না, গণতন্ত্রকে হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হবে না এবং দেশকে কখনোই তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে জাতীয় ঐক্য অটুট রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ৫ আগস্ট উপলক্ষে মঙ্গলবার দেওয়া এক ভার্চুয়াল ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান তার ভাষণে সব শহীদের অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম, আর ২০২৪ সালের আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ কখনোই ১৯৭১ সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ভুলেনি, ঠিক যেমন ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদেরও ভুলবে না। তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে লাখো মানুষ প্রাণ দিয়েছেন।

তারেক রহমান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হলো জনগণের সরাসরি ভোটে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন। তিনি দাবি করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, গত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে স্বাধীনতা-পরবর্তী তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের শাসনামল ছাড়া অন্য কোনো সময়ের তুলনা চলে না।

তিনি বলেন, হিটলারের নাৎসিবাদের মতো ফ্যাসিবাদী শাসনেরও কোনো গৌরবের দাবি নেই। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ডাকাতি করে চ্যারিটি করলে যেমন ডাকাত গ্রহণযোগ্য হয় না, তেমনি অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে ফ্যাসিবাদীদের পক্ষে সাফাই গাওয়াও অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও নজিরবিহীন। সেদিন ফ্যাসিবাদী শাসক গণভবন ছেড়ে পালিয়েছে, সংসদ সদস্যরা সংসদ ভবন ত্যাগ করেছেন, প্রধান বিচারপতি আদালত ছেড়েছেন, এমনকি মন্ত্রীরাও ক্যাবিনেট থেকে পালিয়েছেন। তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পলাতক ফ্যাসিবাদীদের এখনো কোনো অনুশোচনা নেই।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শগত ভিন্নমত থাকবে, যা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে তিনি সতর্ক করেন, যেন এই ভিন্নমত ফ্যাসিবাদ বা উগ্রবাদের পুনরুত্থানের কারণ না হয়। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে জনগণের আদালতে তাদের কর্মসূচি উপস্থাপন করতে হবে এবং জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে কোন নীতি গ্রহণ বা বর্জন করবে।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা না হলে রাষ্ট্রে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

তারেক রহমান বলেন, ‘মায়ের চোখে বাংলাদেশ’ নামে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চান, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে সবাই নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। তিনি ৫ আগস্টকে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের দিন হিসেবে পালনের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শাসক বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যা স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের জন্য একটি বিজয়ের দিন। তিনি এই দিনটিকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে জনগণ এই দিনটি স্বাধীনভাবে উদযাপন করবে।

তারেক রহমান শহীদদের ঋণ শোধ করার জন্য একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গুম, খুন, নির্যাতন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, এই শাসনের বিরুদ্ধে দেড় দশকের আন্দোলনে লাখো মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

তবে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদীরা শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেনি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণ-অভ্যুত্থান গড়ে তুলেছে। তিনি ৫ আগস্টের পরাজিতদের প্রতি রক্ষণশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিজয়ীরা যদি পরাজিতদের নিরাপত্তা দেয়, তবেই বিজয় পূর্ণতা পায়। তিনি সবাইকে আইনের শাসন মেনে চলার এবং সহিংসতা পরিহারের অনুরোধ করেন।

শেষে তিনি গণতন্ত্রকামী সবাইকে সম্মিলিতভাবে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানান।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top