১১ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি অভিযোগ আটক ৩

মোছাঃ মাহমুদা আক্তার নাঈমা, জাককানইবি প্রতিনিধি:

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট ২০২৫) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে এসে প্রথমে ধরা পড়েন ত্রিশালের ওবায়েত হাসান আফিক (রোল: ২০১৬৯৭)। জিজ্ঞাসাবাদে একই চক্রের আরও দুইজনের সম্পৃক্ততা উদঘাটন হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সময় আফিক নিজের স্বাক্ষর মেলাতে ব্যর্থ হন। প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে চেহারার অমিল এবং বিজ্ঞান বিভাগের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকদের সন্দেহ হয়। অভিভাবকের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বড় ভাই পরিচয়ে পনির উদ্দিন খান পাভেলকে নিয়ে আসেন।

একপর্যায়ে কথোপকথনে অসঙ্গতি ধরা পড়লে শিক্ষকেরা আফিকের ফোন পরীক্ষা করে পাভেলের সঙ্গে ভর্তি-সংক্রান্ত লেনদেন ও স্বাক্ষর কৌশল নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট পান। পাভেলের ফোনে অসংখ্য ভর্তি ও চাকরিপ্রার্থীর প্রবেশপত্র ও ছবি পাওয়া যায়। জেরার মুখে আফিক প্রক্সি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

এ সময় পাভেলের ফোনে ‘সিয়াম’ নামে এক শিক্ষার্থীর কল আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাটাবেস যাচাই করে জানা যায়, তিনি সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম—২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী। সিয়াম স্বীকার করেন, কৌশিক কুমার চন্দ নামে এক শিক্ষার্থীর হয়ে তিনি ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন এবং এর বিনিময়ে পাভেলের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কৌশিক বর্তমানে লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালন বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন (রোল: ২০৪৩৯৩)।

জবানবন্দির সময় সিয়ামের ফোনে শান্ত ভূইয়া নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর কল আসে। শান্তই সিয়ামের সঙ্গে পাভেলের পরিচয় করিয়ে দেন। সিয়ামের ফোনে আরও একজনের ওএমআর শিটের ছবি পাওয়া যায়, যিনি বর্তমানে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।

পাভেলের দাবি, তিনি ‘বাবু’ নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে এসব কাজ করেন এবং ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়গুলো মূলত বাবুই পরিচালনা করেন। বাবু সম্প্রতি কৌশিকের ভর্তি করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তবে আফিকের হয়ে ঠিক কে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আফিক ও কৌশিকের প্রক্সি পরীক্ষাই জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ঘটনাটি জামালপুরে ঘটলেও আমাদের ক্যাম্পাসে এসে ধরা পড়েছে। সবার সহযোগিতায় সত্য উদঘাটন হবে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত চালানো হবে, যাতে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ পেতে পারে।”

এ ঘটনার ফলে, গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষার স্বচ্ছতা এবং জামালপুর কেন্দ্র ঘিরে জালিয়াতি চক্রের বিস্তার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top