নিজস্ব প্রতিনিধি:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রোববার ঢাকার রামপুরায় সংঘটিত গণহত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করেছেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ পলাতক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রামপুরায় নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে নাদিম, মায়া ইসলামসহ ২৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় এই মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হাবিবুর রহমান ঢাকায় গণ-অভ্যুত্থান দমনে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালান। ১৯ জুলাই রামপুরা থানার পাশে ৬ বছরের শিশু বাসিত খান মুসার মাথা ভেদ করে গুলি চলে তার দাদি মায়া ইসলামের পেটে লাগে, যিনি পরদিন মারা যান। একই দিন আমির হোসেন নামে এক যুবককে নির্মাণাধীন ভবন থেকে ঝুলে থাকা অবস্থায় ৬টি গুলি করে হত্যা করা হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, শুধু রামপুরা এলাকাতেই পুলিশ ১ হাজার ৭০২ রাউন্ড গুলি ছুড়েছিল।
একই দিন ট্রাইব্যুনালে মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার ইসলামের দায়ের করা আরেকটি অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। ২০১৬ সালে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে মেজর জাহিদুলকে হত্যা এবং পরিবারকে গুমের অভিযোগে সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক, ডিবি প্রধান মনিরুল ইসলামসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। জেবুন্নাহারের অভিযোগ অনুযায়ী, তাকে ও তার দুই কন্যাকে ৪ মাস ৭ দিন গুম করে রাখা হয়েছিল এবং স্বামীকে জঙ্গি বলে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
রামপুরা গণহত্যা মামলার প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ জানান, হাবিবুর রহমানের গুলি চালানোর নির্দেশ সংবলিত অডিও প্রমাণ তদন্তকারীরা উদ্ধার করেছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৭ আগস্ট নির্ধারিত হয়েছে। এদিকে জেবুন্নাহার ইসলামের মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে শেখ হাসিনা সরকার তার জামিন বাতিল করে দেয় এই আশঙ্কায় যে তিনি স্বামীর হত্যার বিচার চাইতে পারেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
এই দুটি মামলার প্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, এই মামলাগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।