১৩ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

চট্টগ্রামের ভূজপুর থানায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, এক সপ্তাহে দুই অপহরণ, ৭ লাখ টাকায় মুক্তিপণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে অবনতির দিকে ধাবিত হলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, থানা পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা কিশোর নেতাদের উচ্ছৃঙ্খলতা, মাটি-বালু ও পরিবহন খাত থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্যে চললেও তা দমনে কার্যকর উদ্যোগ নেই।

এক সপ্তাহে দুই অপহরণ, ৭ লাখ টাকায় মুক্তিপণ:

গত এক সপ্তাহে ভূজপুরে দুটি অপহরণের ঘটনা জনমনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রথম ঘটনায় ভূজপুর থানা মামলা নং-০৭, তারিখ ৮ আগস্ট ২০২৫, দণ্ডবিধি ৩৬৪/৩২৩/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬(২) ধারায় অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা হয়। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৫ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ভূজপুর কাজিরহাট বাজারের জেনারেল হাসপাতালের পাশের এক ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে শান্তি নামক এক এনজিওর পরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন (৩৮) কে অপহরণ করে সাইফুল ইসলাম (২২), মো. পারভেজ (২৮), মো. রেজাউল করিম (৩৮) ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন। অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীকে ভূজপুর থানার অদূরে নির্জন স্থান মোহাম্মদনগর চা বাগানে নিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করে প্রথমে ১ কোটি টাকা এবং পরে ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা আদায়ের পর পরদিন সকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ পরিচয়ে কিশোর অপহরণ, দুই দিন পর উদ্ধার:

দ্বিতীয় ঘটনায় ৯ আগস্ট গভীর রাতে রাঙ্গাপানি চা বাগান সংলগ্ন নলুয়াপাড়া থেকে পুলিশ পরিচয়ে অপহৃত হয় কিশোর সাজু ত্রিপুরা (১৭)। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরা একজনসহ ৮-৯ জনের একটি দল সাদা মাইক্রোবাসে করে এসে তাকে দোকান থেকে বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ১১ আগস্ট ফটিকছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে সাজুকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে কে বা কারা এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভূজপুরের আলোচিত অপরাধী মো. পারভেজের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য ব্যবসা ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগ বহুদিনের। কথিত আছে, সে পলাতক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু তৈয়ব গ্রুপের অস্ত্রধারী ক্যাডারদের অন্যতম। বিগত সরকারের সময় ভূজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পলাতক সেক্রেটারি ও কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী তাপন চন্দ বাবুর সহযোগিতায় উত্তর ফটিকছড়ি জুড়ে মাদক ও অবৈধ অস্ত্র সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করত সে। ওই সময় অবৈধ আয়ের জোরে ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাজিরহাট বাজারের উত্তর পাশে হরিণা পুল সংলগ্ন জায়গা জবরদখল করে বিশালাকারের বিল্ডিং ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করে, যা এখনো মাদক ব্যবসার নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ভূজপুরে মাদক, অবৈধ অস্ত্র, অপহরণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ দীর্ঘদিন ধরে চললেও পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং প্রভাবশালী অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিরাপদে তাদের অপরাধ সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলেছে, যা পুরো এলাকার আইনশৃঙ্খলার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এব্যাপারে ভূজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুল হক আইনশৃংখলা পরিস্থতি অবনতি নিয়ে বলেন, জসিম উদ্দিন অপহরণ ঘটনায় এজাহার ভুক্ত রেজাউল করিম কে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে জবানবন্দি দিয়েছে এবং অন্যান্য আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অপর ঘটনার ব্যাপারেও আমাদের বিশেষ টিম কাজ করছে আশা করছি দ্রুত একটা রেজাল্ট আসবে। তাছাড়া, অপহৃত যুবক ফিরে এসেছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top