১৪ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

চানখাঁরপুল গণহত্যা মামলায় হৃদয়বিদারক সাক্ষ্য: শহীদ পরিবারদের বেদনাবিধুর বর্ণনা

নিজস্ব প্রতিনিধি:

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বুধবার তিন শহীদ পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে শহীদ ইয়াকুবের মা রহিমা আক্তার, চাচা শহীদ আহম্মেদ ও শহীদ ইসমামুল হকের ভাই মহিবুল হক মর্মস্পর্শী সাক্ষ্য দেন।

রহিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “৫ আগস্ট বেলা আড়াইটায় আমার ছেলের রক্তাক্ত লাশ খাটিয়ায় করে আনা হয়। তার পেটে গুলি লেগে ভুঁড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল, রক্ত পড়া থামছিল না।” তিনি টিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে অভিযোগ করেন, ছাপা কাপড়ের পোশাক পরা পুলিশ সদস্যরা তার ছেলেকে গুলি করে। রহিমা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেন।

শহীদ আহম্মেদ তার সাক্ষ্যে বলেন, “আমরা চানখাঁরপুলে পৌঁছালে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনি। তারা প্রথমে ফাঁকা গুলি করে, পরে সরাসরি আমাদের দিকে গুলিবর্ষণ করে।” তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে এই গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম থেকে আসা মহিবুল হক জানান, তার ভাই ইসমামুল হককে গুলি করে হত্যার পর মিটফোর্ড হাসপাতালে কোনো সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। “ডাক্তাররা ময়নাতদন্ত পর্যন্ত করেননি,” বলতে গিয়ে তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। মহিবুল তার ভাইয়ের হত্যাকারী ও নির্দেশদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করেন, যেখানে শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন অভিযোগ করেন যে প্রসিকিউশন সাক্ষীদের শিখিয়ে দিচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করে।

মামলার আট আসামির মধ্যে চারজন পলাতক, যাদের মধ্যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী অন্যতম। বাকি চারজন – শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম আদালতে হাজির ছিলেন।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রসিকিউশন টিম এবং আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, সাদ্দাম হোসেন ও রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী কুতুব উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে অংশ নেন। এই মামলায় এ পর্যন্ত ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top