নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজশাহীর পবা উপজেলায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় এক ব্যক্তি নিজের স্ত্রী, স্কুলপড়ুয়া ছেলে ও দেড় বছরের শিশুকন্যাকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার দুপুরে পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড় গ্রাম থেকে মিনারুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী মনিরা বেগম (৩০), অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মাহিম (১২) ও শিশুকন্যা মিথিলার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনাস্থলে পাওয়া চিরকুটে মিনারুল লিখে গেছেন, “আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম। কারণ আমি একা মরে গেলে আমার পরিবার কষ্টে থাকবে। আমরা ঋণের দায়ে ও খাওয়ার অভাবে মরলাম।” আরেক চিরকুটে তিনি লিখেছেন, “লিখে না গেলে বাংলার পুলিশ কাকে না কাকে ফাঁসিয়ে টাকা খাবে।”
চিরকুটে লেখা আছে, ‘আমি মিনারুল নিচের যেসব লেখা লিখব, সব আমার নিজের কথা। লিখে যাচ্ছি এই কারণে আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাব। এই মরার জন্য কারো কোনো দোষ নেই। কারণ, লিখে না গেলে বাংলার পুলিশ কাকে না কাকে ফাঁসিয়ে টাকা খাবে। আমি মিনারুল প্রথমে আমার বউকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিনকে মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।’
আরেকটি চিরকুটে লেখা, ‘আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম। এই কারণে যে, আমি একা যদি মরে যাই, তাহলে আমার বউ, ছেলে, মেয়ে কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম, সেই ভালো হলো।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের বরাত দিয়ে জানা যায়, মিনারুল কৃষি কাজ, ট্রাক হেলপার ও মাছ ধরার জাল টানার কাজ করতেন। বছর তিনেক আগে পাঁচ কাঠা জমি বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ শোধ করলেও আবারও ঋণে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ জানান, দুই দিন আগে মিনারুল তার কাছ থেকে চাল কেনার জন্য দুই হাজার টাকা নিয়েছিলেন।
রাজশাহী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে মিনারুল স্ত্রী ও সন্তানদের শ্বাসরোধ করে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানান, মিনারুল জুয়া খেলতেন বলে ধারণা করা হয়। তার মা আনজুরা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, “আমি মাটি বেচে আবার টাকা দিতাম বাবা, তুই কেন এমন করলি?”
পুলিশের সিআইডি ও পিবিআই দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঋণ ও আর্থিক সংকটই এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডির মূল কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও পুলিশ বিস্তারিত তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে।