নিজস্ব প্রতিনিধি:
পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করেও রাজধানী ঢাকা ও নিজ জেলা পিরোজপুরে অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে জেএম খালেকের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মঠবাড়িয়ার শাখারীকাঠি গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া খালেক স্কুলজীবনে পুকুর-খাল থেকে শাপলা বিক্রি করে লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। ২০০৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর তার ভাগ্য পরিবর্তন শুরু হয়।
খালেক বরিশাল ও ঝালকাঠীতে দায়িত্ব পালন করেন, পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) বদলি হলে রাজারবাগে一উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার আত্মীয়ের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি পুলিশ নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চাকরির জন্য উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী নিয়োগে তিনি ঘুষ নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি ঢাকার বসুন্ধরা ও মিরপুরে একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নিজ জেলায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ তলা ভবন এবং অর্ধশতাধিক বিঘা জমি ক্রয় করেন। মঠবাড়িয়া পৌরসভার মোমেনিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় তার নির্মিত ৪ তলা ভবনটি স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে。
জেএম খালেক অন্য ড্রাইভারের নামে কোটি টাকার একটি গাড়ি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যার নম্বর ঢাকা-মেট্টো (ঘ-১২৩০৩৭)। পূর্বে তিনি সংসদ সদস্যের স্টিকার ব্যবহার করে গাড়ি চালাতেন বলে জানা গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক শনাক্তকরণ এড়াতে তিনি বিদেশি রাউটার ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন নামে প্রায় শতাধিক মোবাইল সিম ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী করতে কোটি টাকা খরচ এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে。 গত ৫ আগস্ট মঠবাড়িয়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা মামলা ও হামলার ভয়ে ভারতে আত্মগোপন করেছেন,এবং খালেক সেখানে গিয়ে তাদের সাথে করেছেন আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি তাকে গ্রেফতারের জন্য যৌথ বাহিনী তার বাসায় অভিযান চালালেও তথ্য পেয়ে তিনি পালিয়ে যান। এর আগে বাসিন্দা তার বিরুদ্ধে তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে খালেক মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগ দুদকে দেওয়া হলে সেখানেও তা তদন্ত না করে এড়িয়ে যাওয়া হয়। পরে অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে তিনি করোনাকাল চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বাচ্চু মিয়া আকন বলেন, “কনস্টেবল পদে খালেকের সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়টি দুদকের তদন্ত করা উচিত。” উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম তার দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। উপজেলা জামায়াতের যুব ও ক্রীড়া সভাপতি তারেক মনোয়ার বলেন, “সে যতবড় ধূর্তই হোক, তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।”