নিজস্ব প্রতিনিধি:
পটুয়াখালী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনির দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা আফরোজের সঙ্গে তার কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এই অডিও রেকর্ডটি প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আনেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন।
বুধবার রাতে ‘সম্পত্তির লোভে দুই সন্তানের মাকে ভাগিয়ে বিয়ে করে রনি’ শিরোনামে ইলিয়াস হোসাইন তার ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে এই অডিওটি আপলোড করেন। অডিওটি আপলোড হওয়ার পর মুহূর্তেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে আলোচনার সৃষ্টি করে।
পাঠকের জন্য অডিও রেকর্ডের কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো-
ফারজানা: হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।
রনি: ওয়ালাইকুম আসসালাম।
ফারজানা: তোমার শরীর কি বেশি খারাপ?
রনি: জ্বি।
ফারজানা: কী হয়েছে?
রনি: ক্লান্তি, আর কিছু না। কাল সারারাত ঘুমাতে পারিনি। অফিসে আসছি, আসার পর কাজ করার মধ্যে কারেন্ট চলে গেল। শুয়ে ছিলাম, এইমাত্র উঠলাম, নামাজে দাঁড়াব, আরকি।
ফারজানা: রোজা কি আছো?
রনি: হুম, আছি।
ফারজানা: আমরাও রোজা আছি। তোমার সঙ্গে একটু দেখা করতে চেয়েছিলাম।
রনি: এটা আমার জন্য একটা মানসিক অফেনসিভ কাজ করে। তোমরা কল করলে, তোমাদের সাথে কথা বললে, দেখা-সাক্ষাৎ করলে আমাকে আরও অসুস্থ বানিয়ে ফেলে। এর আগে কথা নাই বার্তা নাই আসছো সারপ্রাইজ দিতে, আমার ঈদটা হারাম হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে তোমরা কেন দেখা করতে আসছো, আমি কিছুই জানি না। এখন আবার তোমাদের সঙ্গে দেখা করতে হবে- এগুলো আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। এ বিষয়গুলো বুঝতে হবে। আমি একজন সিস্টেমেটিক মানুষ, সিস্টেমের বাইরে যেতে পারি না।
ফারাজানা: তুমি কাল বলেছিলে দেখা করবা, এজন্য ফোন দিয়েছি।
রনি: ঠিক আছে, কাল বলেছিলাম, কাল ওকে ছিলাম। কিন্তু আজকে পারছি না। আর কথা নাই বার্তা নাই তোমরা ঢাকায় আসছো কেন? জেসিকা কোথায়? জেসিকা আসছে?
ফারজানা: জেসিকাও আসছে, আমরা সবাই আসছি।
রনি: আচ্ছা, কিজন্য আসছো তোমরা ঢাকাতে।
ফারজানা: আসলে তুমি তো সব জানো। আমার পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে। এখন কী করব, বলো না তুমি। ভেবেছিলাম, আমাদের জন্য তুমি একটা কিছু করবা।
রনি: না, না, না। তোমার জন্য কিছুই করা সম্ভব না। আরও হিতে বিপরীত হয়ে যাচ্ছে, মন বিষিয়ে যাচ্ছে। রাগ হয়ে যাচ্ছে, ক্রোধ হয়ে যাচ্ছে।
ফারজানা: অন্তত প্রতিদিন দুপুরে যদি আমাদের সঙ্গে দেখা করো, তুমি আমাদের গার্ডিয়ান না?
রনি: না, এইটা হবে না। এইটা সম্ভব না। আমি নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতেছি। যদি কখনো…আই উইল কল ইউ। আমার ওই জিনিস-ই হয়ে গেছে। আমার জীবনের একটা মেয়াদ আছে।
ফারজানা: আচ্ছা, তুমি আমাকে যখন যেটা বলেছো মনে করে দেখ তো, আমি তোমার প্রত্যেকটা কথা শুনেছি।
রনি: অতীত টানা দরকার নাই।
ফারজানা: তুমি আমাকে বলেছো- চিটাগং চলে যাও, চলে গিয়েছি।
রনি: না, না, চলে যাও নাই। তুমি ভুল বলছো।
ফারজানা: যখন বলেছো- ফোন দিও না, ফোন দিই নাই; টেক্সট দিও না, টেক্সট দিই নাই। স্টিল নাও আমি তোমার ওয়াইফ। আমি কি আমার হাজবেন্ডের কাছ থেকে এইটুকু আশা করতে পারি না যে, সে আমার সঙ্গে একটু যোগাযোগ করবে।
রনি: দেখো, জেসিকার কথামতো আমি তালাকটা উইথড্রো করছি তোমার সামাজিক ও নিজের প্রয়োজনে। কিন্তু তুমি যদি এসব ক্লেইম করো, এক সেকেন্ডও তোমার সঙ্গে কথা বলব না, এখন লাইনটা কেটে দেব।
ফারজানা: আমি ক্লেইম করছি না।
রনি: নো, তুমি বারবার ক্লেইম করছো- আমি অমুক, আমি অমুক, আমি অমুক। জিনিসটা তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। আমি তোমাকে দয়া করতেছি, সাহায্য করতেছি টাকা দিয়ে এবং আমার নামটা তোমাকে ব্যবহার করার অ্যালাউ করতেছি। কিন্তু বিনিময়ে তুমি স্বার্থের জন্য আমার দিকে হাত বাড়াচ্ছো। দিস ইজ ভেরি রং।
ফারজানা: আচ্ছা, তুমি একটা সত্য কথা বলো তো- জীবনে কি কখনো আমাকে ভালোবাসো নাই?
রনি: না, না, কখনই না, কখনো না।
ফারজানা: তাইলে যে কথাগুলো বলেছিলে, সেগুলো এমনি বলেছিলে?
রনি: এমনি বলেছিলাম, এমনি বলেছিলাম, আবেগে বলেছিলাম।
ফারজানা: তোমার কথাতেই ওকে (ফারজানার প্রথম স্বামী) ছেড়েছি। তোমাকে আবার বিয়ে করেছি।
রনি: আমার কথাতে কোনো কিছুই ছাড়ো নাই। তুমি তোমার প্রয়োজনেই আমাকে বিয়ে করছো এবং আমাকে যতটুকু ব্যবহার করার ততটুকুই করেছ।
ফারজানা: আল্লাহ, তোমার কাছে এটা মনে হয়, আমি তোমাকে ব্যবহার করেছি?
রনি: সেটাই মনে হয়। আমি তোমাকে অন্তর থেকে চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার জন্য, সাহায্য করার জন্য, আশ্রয় দেওয়ার জন্য। এখন এটাকে অ্যাভেইল করার জন্য যে ধরনের মেন্টাল অনেস্টি দরকার, কর্ম দরকার, সেটা তুমি জানো আর তোমার আল্লাহ জানে। ওই জায়গাতে এমন কোনো খুঁত হয়েছে, যেখান থেকে আল্লাহ বরকত উঠিয়ে নিয়েছেন। আমি তো সবকিছুর অ্যাগনেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম, সবকিছু ম্যানেজ করে নিয়েছিলাম। আমি ওখান থেকে রুনুকে (প্রথম স্ত্রী-কামরুন নাহার রুনু) অরুণাপল্লীতে নিয়ে গিয়েছি। দিস ইস নট এ মেটার অব জোকস। বাংলাদেশের এক কোটি মানুষও জীবনে এই কাজ করতে পারবে না। কেউ পারবে না। বাট, আমি এই কাজটা করেছিলাম। ওইখানে নেওয়ার পর ‘আমার ফুল পাওয়ার আছে’, ‘পুরো শক্তি আছে’, ‘আমি জোর করে তোমাকে এই কাজ করেছি’-এসব কথা তাকে (রুনু) বলেছো।
ফারজানা: এই শোনো- তুমি আমার সঙ্গেও সংসার করেছো, আপুর (রুনু) সঙ্গেও সংসার করেছে। তোমার কি মনে হয়- আমি এই কথাগুলো উনাকে বলব! বলো। শুধু আমাকে ছাদে নিয়ে (রনু) জিজ্ঞাসা করেছে- ‘তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি…’।
রনি: আমি যখন নিচে এসে রুমে টান দিয়ে তোমাকে নিয়ে গেলাম, তার আগে তোমাদের দুজনের মধ্যে যে কথা হয়েছে দ্যাট ইজ ভেরি রং অ্যান্ড হট।
ফারজানা: আমি কিন্তু চুপ করেছিলাম। উনি (রনু) আমাকে কন্টিনিউয়াসলি….।
রনি: উনি (রুনু) তোমাকে দশটা থাপ্পড় দিলেও তোমার কথা বলা দরকার ছিল না।
ফারজানা: আমি তো চুপ করেই ছিলাম। উনি আমাকে বলে- বলো, বলো।
রনি: আমি তোমাকে বারবার বলছি- আমার এই টোটাল ফিজিক্যাল ফিটনেসটা চলে গেছে। এটা একটা বিশেষ অবস্থাতে হয়েছে। এটা তোমার সঙ্গেও থাকবে না কয়দিন পর। আর সে (রুনু) যখন বলছে- তার (রনি) তো কিছু নাই। আমি তোমাকে বলেছি- সে (রুনু) অত্যন্ত মেধাবী, খুব চালাক। এমনি দেখলে বোঝা যায় না সে বোকাসোকা। যখন তুমি বন্ধু হিসেবে পাবা তখন মনে হবে সে বোকা। কিন্তু যখন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ফাইট করবা, তুমি এক সেকেন্ড তার সঙ্গে টিকতে পারবা না-এই কথাগুলো তোমাকে বলেছি। সে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছে। তোমার সঙ্গে সে বলেছে- তার কোনো (রনি) পাওয়ার নাই। তুমি বলছো- ‘পাওয়ার নাই মানে তার ফুল পাওয়ার আছে।’
ফারজানা: না, আমি এভাবে বলি নাই। আমাকে উনি (রুনু) বলেছে, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। ওর (রনি) তো কিছু নাই। আমি বলি- ওর কিছু নাই মানে? সে (রুনু) বলে- তোমাদের মধ্যে…। আমি বলি- না আছে তো। এটাই বললাম। আমি তো মিথ্যা বলি না, তুমি তো জানো।