নিজস্ব প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের অভ্যন্তরীণ বার্তা ফাঁসের অভিযোগে কনস্টেবল অমি দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর ভেতরে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত জোরদার করা হয়েছে।
গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় এসআই আবু সাঈদ গুরুতর আহত হওয়ার পর দিন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ ওয়াকিটকিতে একটি জরুরি নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, পুলিশের প্রতিটি টহল দল অস্ত্রসজ্জিত হয়ে বের হবে এবং অস্ত্র বের করামাত্র গুলি চালাবে। থানা অপারেটর অমি দাশ এই সংবেদনশীল নির্দেশনাটির ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
১৭ আগস্ট অমি দাশকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তে উঠে এসেছে, অমি দাশ দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের অভিযানের খবর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতাদের আগে জানিয়ে দিতেন, যার ফলে একাধিক অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অমি দাশ ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তার বাবা পটিয়া পৌর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরেই তিনি কনস্টেবল পদে নিয়োগ পান এবং পরবর্তীতে টেলিকম ইউনিটে স্থানান্তরিত হন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আশঙ্কা করছি, বাহিনীর ভেতরে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত কিছু ব্যক্তি থাকতে পারেন, যারা অপরাধী বা রাজনৈতিক নেটওয়ার্ককে তথ্য সরবরাহ করছেন। তাদের শনাক্ত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।”
গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে যে অমি দাশ কমিশনারের নির্দেশ রেকর্ড করার পর হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠাতেন। এভাবে একাধিক অভিযানের তথ্য আগাম ফাঁস হওয়ায় টার্গেট করা সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হতেন।
খুলশী থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, অমি দাশকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে দেওয়া হয়েছে।
আইনবিদ ও মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, “রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য ফাঁস করা গুরুতর অপরাধ। এই আইনে মামলা হওয়া যৌক্তিক।”
চট্টগ্রামের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ডিসি মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, “এই চক্রে আর কারা জড়িত, সবকিছু তদন্ত করা হবে।” পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।