মোছাঃ মাহমুদা আক্তার নাঈমা, জাককানইবি প্রতিনিধি:
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের দাবিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণসমাবেশের আয়োজন করেছে ।
রোববার (২৪ আগস্ট ২০২৫) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এসময় বিভিন্ন স্লোগান এবং ক্যাম্পাসজুড়ে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের দাবি পুনরায় উত্থাপন করেন। সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে জানান, প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা শিক্ষার্থীদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করছে।
উদ্ভূত এই দাবিকে ঘিরে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন কতৃপক্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা নীতিগতভাবে ছাত্র সংসদ গঠনে একমত। বিষয়টি কার্যকর করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। আমরা সে প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি। ইতোমধ্যে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এর খসড়া তৈরির চেষ্টা চলছে। আশা করছি, শিগগিরই একটি সুস্পষ্ট অগ্রগতি দেখা যাবে।”
প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। তারাও অনেক ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে। আমরা প্রশাসনও চাই ছাত্র সংসদ দ্রুত গঠিত হোক। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ইউজিসির অনুমোদন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সম্মতি অপরিহার্য। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই আমরা নির্বাচনের পথে যেতে পারবো।”
ছাত্র উপদেষ্টা ড. আশরাফুল আলম বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি যথার্থ এবং প্রশাসনও এ ব্যাপারে ইতিবাচক। তবে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ছাড়া নির্বাচন দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্যই আমাদের কাজ কিছুটা সময়সাপেক্ষ হচ্ছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব নীতিমালা তৈরি হোক এবং সেই অনুযায়ী নির্বাচন দেওয়া যাক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, “ছাত্র সংসদ নিয়ে নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদন হাতে পেলেই রোডম্যাপ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঘোষণা করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে খুব দ্রুত একটি কার্যকর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা। আশা করছি শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া যাবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদ কবির বলেন, “এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রশাসন থেকে সুষ্ঠু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় ছাত্র সংসদ গঠনের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে নিজেদের মত প্রকাশের সুযোগ পাক। তাই দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।”
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, “ছাত্রদল সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছে। আমাদের অঙ্গীকার হলো দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি আধুনিক ও কার্যকর ছাত্র সংসদ গঠন করা। এজন্য আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।”
আইন ও বিচার বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জেনাস ভৌমিক বলেন, “ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক অরাজকতার শিকার হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হলেও সেগুলো তুলে ধরার বা সমাধান আদায়ের কোনো বৈধ কাঠামো নেই। তাই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্র সংসদ গঠন একান্ত জরুরি।”
আবার,”ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ নেই। যদি দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে আমরা অনশনেও যাবো”- এমনটা বলে হুঁশিয়ারি দেন ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য সরকার।
জানা যায়,২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় দুই দশকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্র সংসদ হয়নি। গত বছরের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীরা সংগঠিত আন্দোলন করলে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি ওঠে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন আশ্বাস দেওয়া হলেও এক বছর কেটে গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
এককথায়,ছাত্র সংসদ গঠিত হলে শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পাবে, পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের দেওয়া আশ্বাস আদৌ বাস্তবে আলোর মুখ দেখে কিনা এখন সেটাই দেখার পালা।