মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
একটি ছোট্ট সেতু। যেটি হলে বদলে যেতো পুরো এলাকার চিত্র। বন্ধ হতো দীর্ঘদিনের কষ্ট, দূর হতো দুর্ভোগ, আর সহজ হতো চিকিৎসা, দেশসেরা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা গামী কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রীর যাতায়াতের কষ্ট , কৃষি পন্য বাজারজাত করণ, । অথচ সেই সেতুর অভাবে আজও রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন এবং ইসলামপুর ইউনিয়নে র প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আটকে আছেন জীবনসংগ্রামে।
বহরপুর রামদিয়া সরকের কোলঘেঁষা চন্দনা নদীর নারায়নপুর, মাচাল ঘাট নামক স্থানে একটি ব্রিজের দাবি অনেক পুরোনো। অথচ আজও সেই দাবির কোনো বাস্তবায়ন নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে এখানে ২০০৬ সাল থেকে বাঁশের মাচাই ছিলো ভরসা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে স্থানীয় জনগণের উদ্যোগে ও রমজান আলী মণ্ডলের নেতৃত্বে সেতুটি নির্মিত হয় বাঁশ দিয়ে। বাঁশের মাচাল দিয়ে সেতুটি নির্মাণের পর জায়গাটি মাচাল ঘাট নামে পরিচিতি পায়, চন্দনা নদীর এই স্থানটি এখনো মাচাল ঘাট নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর ২০২৩ সালে বাঁশ, কাঠ দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হলেও, এবছর (২০২৫ সালের) আগস্ট মাসে প্রবল স্রোত ও ভেসে আসা কচুরিপানার চাপে সেতুটি ভেঙে যায়। এখন আর এখানে পারাপারের কোন ব্যাবস্থা নেই। এই সেতু পার হয়ে প্রতিদিন নবাবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষার জন্য দেশ সেরা স্কুল, স্বাবলম্বী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাযালয়ে, আসা-য়াওয়া করতো। এছাড়া ও অন্যান্য স্কুল কলেজ মাদ্রাসা হাজারের বেশি শিক্ষার্থী কাঠের সেতুটি ব্যবহার করতো।
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দী উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন ও নবাবপুর ইউনিয়নের (গাংচর পদমদী ও নারায়ণপুর) মধ্যবর্তী চন্দনা নদীর উপর নির্মিত কাঠের সেতুটি ভেঙে পড়ায় এলাকাবাসীর চলাচল ও জীবনযাত্রায় চরম ভোগান্তি নেমে এসেছে।
সেতুটি শুধু গ্রামীণ জনগণের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যমই ছিল না, বরং স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শত শত শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন পথ ছিল এটি। পণ্য পরিবহনসহ বাজারে আসা–যাওয়ার ক্ষেত্রেও সেতুটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষকে প্রায় ২–৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে, যা সময় ও অর্থ উভয় দিক থেকেই কষ্টকর। বিশেষ করে ছোট শিশু ও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এখানে অবিলম্বে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে জনদুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে এবং শিক্ষা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।
আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, জনগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইসলামপুর–নবাবপুর সংযোগ সেতুর স্থানে একটি স্থায়ী ও মজবুত সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করুন, যাতে দীর্ঘদিনের কষ্টের অবসান ঘটে এবং এলাকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
এখানে একটি বেইলি ব্রিজ বা স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হলে জনদুর্ভোগ লাঘব সহ সরাসরি মীর মশাররফ হোসেন কমপ্লেক্সের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
সাথী আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, কাঠের সেতুটি পারহয়ে আমরা সহজেই স্কুলে যেতাম এখন দুই কিলোমিটার বেশি ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। এখানে যান বাহন তেমন পাওয়া যায় না,তাই বই খাতা নিয়ে এতো পথ ঘুরে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।সরকার যদি এখনে একটা ব্রিজ দেয় তাহলে আমরা সবাই সহজে স্কুলে যেতে পারাতাম।
গাংচর পদমদীর কৃষক, জালাল শেখ হতাশা নিয়ে বলেন আমার উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে গেলে অনেক দুর ঘুরে যেতে হয়, সময়মতো পৌঁছানো যায় না, দামও পাওয়া যায় না। একটা ব্রিজ আমাদের চাষাবাদকেই বাঁচাতে পারতো।”
গৃহবধূ আনিকা খাতুন বলেন, একটু অসুস্থ হলেই বিপদ ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এপারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অথচ ওপার দিয়ে শত শত গাড়ি যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন,প্রতিটি নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা এসে সেতুর প্রতিশ্রতি দিয়ে যান, কিন্তু পরে কেউ আর ফিরে তাকান না। অথচ একটি সেতুই তাদের জীবনধারাকে বদলে দিতে পারে।
প্রথম দিকের সেতু নির্মাণের উদ্দোক্তা পদমদী গ্রামের মোঃ রমজান আলী মন্ডল বলেন, আমি গ্রামের যুবক ছেলেদের সাথে নিয়ে বাড়ী বাড়ী থেকে বাঁশ এনে এখানে বাঁশের পুল বানাই। সেটা ভেঙে গেলে সংস্কার করার উদ্দ্যোগ নিলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কামাল আজাদ ১৪টি পাকা পিলার দেন। এবং কিছু কাঠ দেন। তবে এই সেতুর জন্য সরকারি টাকা দেওয়া হয়েছে এমনটা আমার জানা নেই। কারণ তার দেওয়া পিলার আর কাঠের বাইরে সব খরচ করেছে এলাকাবাসী। এখন পুলটি ভেঙে গেছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চরম সমস্যা হচ্ছে। তেমনি বাজারে কৃষিজাত পণ্য সরবরাহেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত পুলটি পুননির্মাণের ব্যবস্থা করলে সবাই উপকৃত হবে।
নবাবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাদশাহ আলমগীর বলেন, মাচাল ঘাটে একটি সেতু নির্মাণ হলে নবাবপুর- ইসলামপুর উভয় ইউনিয়নের মানুষ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব দিক থেকেই উপকৃত হবে। সেতু নির্মাণ হলে জেলা সদরের সাথে মীর মশারফ কমপ্লেক্সের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন,
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোস্তাফিজুর রহমান (ইউএনও) বলেন:
“চন্দনা নদীর মাচাল ঘাটে সেতু নির্মাণের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এখানে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে, যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তা পাঠানো হবে। জনস্বার্থে আমরা চাই দ্রুত সমাধান হোক। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।