২রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

উত্তরা ইপিজেডে টানা আন্দোলনের পর সংঘর্ষে শ্রমিক নিহত, আহত ৮

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

নীলফামারীর উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) চার দিন ধরে উত্তপ্ত। এভারগ্রিন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেডের শ্রমিকদের টানা আন্দোলনের পর সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করে। তবে কারখানা বন্ধের পরও আন্দোলন থামেনি। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন এভারগ্রিন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিক হাবিব ইসলাম (২০)। তিনি ইপিজেডের ইকো কোম্পানিতে কাজ করতেন। হাবিব নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে।

এ ঘটনায় আরও আটজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নীলফামারীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরহান তানভিরুল ইসলাম শ্রমিক নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সকালে শ্রমিকরা ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার খোঁজে এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশে জানিয়েছে, টানা আন্দোলনে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী ২ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী নোটিশে পুনরায় চালুর কথা জানানো হবে।

এদিকে শ্রমিকরা তাদের ২০ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন। এর মধ্যে রয়েছে— উৎপাদন টার্গেট কমানো, ওভারটাইম নিশ্চিত করা, ছুটি যথাযথভাবে প্রদান, বেতন ও ভাতা সময়মতো পরিশোধ, আবাসন ও প্রমোশনের জটিলতা নিরসন, সকাল ৭টার আগে ডিউটি না রাখা, গর্ভবতী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করা এবং ক্ষুদ্র কারণে চাকরিচ্যুত না করা।

শ্রমিক সোহাগ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “আমরা টানা চার দিন শান্তিপূর্ণভাবে দাবি তুলেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো আলোচনা করেনি। উল্টো কারখানা বন্ধ করে আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে।”

এ বিষয়ে জানতে নীলফামারী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাইদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top