২রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সাবেক আইজিপি মামুনের চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি: আন্দোলন দমনে হাবিব-হারুন ছিলেন মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী

নিজস্ব প্রতিনিধি:

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এক চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-০১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রাজসাক্ষী হিসেবে হাজির হয়ে তিনি অভিযোগ করেন যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব ও ডিবি প্রধান হারুনুর রশীদ আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিমাত্রায় উৎসাহী ছিলেন।

জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে থাকা মামুন তার জবানবন্দিতে প্রকাশ করেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্ববর্তী রাতে তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ৫০ শতাংশ ভোট রাতে ব্যালট বাক্সে ভরে রাখার জন্য। তিনি পুলিশ বাহিনীতে ‘গোপালগঞ্জ সিন্ডিকেট’-এর প্রভাবের কথাও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন।

সাবেক আইজিপি তার সাক্ষ্যে দাবি করেন, আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ এবং ব্লক রেইডের মতো সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিকভাবে গৃহীত হতো। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ সরাসরি শেখ হাসিনার কাছ থেকে আসত বলে তিনি জানান। তার মতে, হাবিব ও হারুন এই মারণাস্ত্র ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ প্রদর্শন করতেন।

মামুন আরও অভিযোগ করেন যে র‌্যাব-১ এ ‘টিএফআই সেল’ নামে একটি গোপন বন্দিশালা ছিল, যেখানে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও সরকারের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের আটক করে নির্যাতন করা হতো। অন্যান্য র‌্যাব ইউনিটেও একই ধরনের বন্দিশালা ছিল বলে তিনি জানান।

তিনি স্বীকার করেন যে এসব নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই আসত এবং কখনো সরাসরি নির্দেশ দিতেন তারেক সিদ্দিকী। র‌্যাবের এডিসি অপারেশন এবং গোয়েন্দা শাখার পরিচালক আয়নাঘরে আটক ও ক্রসফায়ারে হত্যার মতো কাজ করতেন বলে তিনি তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান তিনি স্বেচ্ছায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচন করতে চান। শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এই মামলায় ইতিমধ্যে জুলাই আন্দোলনে আহত, শহীদ পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকসহ ৩৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রসিকিউশন এই মাসেই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top