৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

পটুয়াখালী ভার্সিটির, ঐতিহাসিক ঘোষণা: দীর্ঘ ৬৩ বছর পর আবারও চালু ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রির কম্বাইন্ড ডিগ্রি।।

জাকির হোসেন হাওলাদার, দুমকী ও পবিপ্রবি প্রতিনিধি:

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) একাডেমিক কাউন্সিলের ৫৪তম সভায় দীর্ঘদিনের আন্দোলনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গৃহীত হলো একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কম্বাইন্ড ডিগ্রি “BSc. Veterinary Science and Animal Husbandry (BSc. Vet Sc. & AH)”—যা ১৯৬২ সালের পর এই প্রথম দুটি পৃথক ডিসিপ্লিনকে আবারও একত্রিত করলো।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাইস-চ্যান্সেলর ও একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। সভা সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন।
সভায় বক্তব্য রাখেন প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান, ট্রেজারার প্রফেসর মো. আবদুল লতিফ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জি. এম. আতিকুর রহমান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান খান এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নাসরিন সুলতানা লাকী প্রমুখ।

সভার আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে এএনএসভিএম অনুষদের অধীন ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (DVM) ও অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি (BSc. AH Hons)—এই দুটি পৃথক ডিগ্রিকে একত্রে সমন্বিত করে নতুন কম্বাইন্ড ডিগ্রি BSc. Vet Sc. & AH চালুর সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।

উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চালু হওয়া এই কম্বাইন্ড ডিগ্রি তখন বিভক্ত করে আলাদাভাবে DVM ও BSc. AH (Hons) করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৬৩ বছর পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে পবিপ্রবিতে পুনরায় চালু হলো এ ডিগ্রি।

সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের জোয়ার। ঐতিহাসিক এ অর্জনে তারা ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলামকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। ভিসির বক্তব্য চলাকালে শিক্ষার্থীরা করতালির মাধ্যমে তাকে সাদুবাদ দেন, কেউ কেউ আনন্দে আত্মহারা হয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুহূর্তের মধ্যেই টিএসসির সামনে রূপ নেয় এক আনন্দোৎসবের আসরে।

সভাশেষে পবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “আজকের এই সিদ্ধান্ত কেবল একটি একাডেমিক নীতি নয়; এটি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের প্রতীক। আমি শুরু থেকেই বিশ্বাস করতাম, দুটি ডিসিপ্লিনকে সমন্বিত করে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু করলে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমঞ্চে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। তাই আমি সর্বদা এই দাবির পক্ষে ছিলাম এবং আজ তা বাস্তবায়িত হতে দেখে আমি গর্বিত। এটি শুধু পবিপ্রবির জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণার ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ সিদ্ধান্ত থেকে অনুপ্রেরণা পাবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু ডিগ্রিধারী নয়, তারা হবে গবেষণা, জ্ঞানচর্চা ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত কর্মী। কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালুর মাধ্যমে তাদের সুযোগ বাড়বে, কর্মক্ষেত্রে নতুন দরজা খুলবে এবং প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে তারা অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। আজকের এই সাফল্য প্রমাণ করে—সংগঠিত দাবি, ইতিবাচক আন্দোলন ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো পরিবর্তন সম্ভব।” তার কথাগুলো শুনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা করতালির ঝড়ে বারবার কৃতজ্ঞতা জানান। কেউ কেউ আনন্দে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে দিনটি যেন এক উৎসবের দিন হয়ে ওঠে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশগ্রহণকারী অতিথিদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি ডিগ্রি পরিবর্তন নয়—এটি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, খামারিরা আরও উপকৃত হবেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গ্রাজুয়েটদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা শক্তিশালী হবে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top