৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিক্ষক হয়রানির অভিযোগ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ উঠেছে আশরাফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। মিথ্যা তথ্যে লিখিত অভিযোগ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট মহলে এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। এতে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।

জানা যায়, সম্প্রতি আশরাফুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তদন্ত কমিটিতে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগে তিনি দাবি করেন, ২০১৫ সালে ফোকলোর বিভাগে প্রভাষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করা হয়েছে এবং ওই অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের একজন ছিলেন মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহ।

উল্লেখ্য, অভিযোগকারী আশরাফুল ইসলাম নিজেও একই সময়ের নিয়োগ প্রার্থী ছিলেন। চূড়ান্ত নিয়োগে নির্বাচিত না হওয়ায় মনঃক্ষুন্ন হয়েই মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহর বিরুদ্ধে। এ দাবি করে মেহেদী উল্লাহ আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়ার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করা হয়েছিল। তিনি তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানালে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধেই এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগপত্রে আশরাফুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ১২ মে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ঢাকার লিয়াজো অফিসে একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর প্রভাষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় তিনজন উত্তীর্ণ হন এবং সেদিনই মৌখিক পরীক্ষা শেষে দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ বিজ্ঞপ্তিতে মাত্র একটি পদে নিয়োগের কথা উল্লেখ ছিল।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ড. মেহেদী উল্লাহর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ করেনি। তার এসএসসি জিপিএ ৪.১৩, এইচএসসি জিপিএ ৪.৫০, অনার্স সিজিপিএ ৩.৩১ এবং মাস্টার্স সিজিপিএ ৩.৬৮। এছাড়া তার উল্লেখিত পুরস্কার কোনো জাতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া নয় এবং প্রকাশিত গ্রন্থ বা গবেষণাপত্রও স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। ফলে তাকে ‘বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহ বলেন, “আশরাফুল ইসলামের অভিযোগপত্রে আমার ব্যাপারে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে আমি আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি, অথচ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক কোনো প্রভাব ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ করেই আমি আবেদন করি। আমি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম হয়ে প্রভাষক স্থায়ী পদে যোগদান করি এবং নিয়োগকৃত দুজন প্রার্থীর মধ্যে প্রথম হই। অভিযোগকারী বিভিন্ন মহলে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি লিখিত পরীক্ষায় ভালো করলে দ্বিতীয় হওয়ার সুযোগ ছিল। সেটি কি তিনি হয়েছেন? আর্থিক লেনদেনের তথ্যও সম্পূর্ণ অপপ্রচার।”

মেহেদী উল্লাহ জানান, তিনি ছাত্র বয়স থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। তার গবেষণা, গল্প ও উপন্যাস মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার ‘ফোকলোরের প্রথম পাঠ’ বই প্রকাশ করেছে স্বীকৃত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বেহুলা বাংলা, যা বাংলা একাডেমির অনুমোদনে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নিয়মিত স্টল বরাদ্দ পেয়ে থাকে। এছাড়া তিনি ২০১৩ সালে জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ১২ মে ফোকলোর বিভাগে একটি প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সর্বনিম্ন সিজিপিএ ৩.৫০ (৪-এর মধ্যে) চাওয়া হয়। তবে ‘ঘ’ নং শর্তে বলা হয়, ফোকলোর বিভাগের বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত আংশিক শিথিল করা যাবে।

একই বিজ্ঞপ্তির ১৬ নং শর্তে উল্লেখ করা হয়, বিশেষ যোগ্যতা বলতে স্বীকৃত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ, স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ বা কোনো স্বীকৃত সংস্থা কর্তৃক জাতীয় পুরস্কারকে বোঝাবে। বিশেষ যোগ্যতা নির্ধারণের সম্পূর্ণ এখতিয়ার নিয়োগ বোর্ডের হাতে থাকবে।

এ ঘটনায় একটি কল রেকর্ডও ফাঁস হয়েছে, যেখানে আশরাফুল ইসলামকে ড. মেহেদী উল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। কল রেকর্ডে আশরাফুল দাবি করেন, ২০২১ সালে ফোকলোর বিভাগের ২জন প্রভাষক নিয়োগের বোর্ডে আর্থিক লেনদেন হয়েছে এবং তাকে বঞ্চিত করে দুজন প্রভাষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি তৎকালীন বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধেও আর্থিক লেনদেনের ইঙ্গিত দেন। এছাড়া তিনি মেহেদী উল্লাহর কাছে অন্য শিক্ষকদের ব্যক্তিগত রেজাল্ট চেয়ে বসেন, যাতে তিনি পরে অভিযোগে ব্যবহার করতে পারেন।

ড. মেহেদী উল্লাহ জানান, “তিনি আমার কাছে অন্য শিক্ষকদের ব্যক্তিগত নথি চেয়েছিলেন, যা দেওয়া অপরাধ। আমি তা দিইনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি উল্টো আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ আনেন।”

যদিও আশরাফুল ইসলাম এ ধরনের কথোপকথনের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন, তবে হাতে আসা কল রেকর্ড তার অস্বীকারকে মিথ্যা প্রমাণ করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেওয়া এ ধরনের অভিযোগগুলো নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্তের কাজ এখনো শেষ হয়নি।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top