সজীব হাসান, (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
রেলওয়ে পাকশী বিভাগের ভুমি দপ্তর থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং সড়কের ফুটপাতের উপর দোকান ঘর নির্মান করার লাইসেন্স দিয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। রেলওয়ে ভুমি বিভাগের এমন সিদ্ধান্তের তথ্য জানাজানি হবার পর স্থানীয় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ওই জায়গার দখল নিয়ে লাইসেন্সধারী সিরাজ ও দীর্ঘ দিনের দখলদার মিঠু গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শুক্রবার সকালে লাইসেন্সধারী সিরাজ দোকান ঘর নির্মানের জন্য রাজমিস্ত্রী নিয়ে কাজ শুরু করে। এনিয়ে সিরাজ, দখলদার মিঠু ও স্থানীয়দের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং স্থানীয়দের বাধার মুখে সিরাজ তার লোকবল নিয়ে পিছু হটে যায়। এঘটনায় যে কোন সময় বড় রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনার আশংকা করছে স্থানীয় সচেতন মহল। জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী) রেলওয়ের অন্যতম বৃহৎ জংশন সান্তাহার।
রেলওয়ে জংশন স্থাপনের কারনে সেই সময় থেকে শহরটি দুই ভাগে বিভক্ত। দুই পাশের মানুষের সহজ চলাচলের জন্য সেই সময় ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি লেভেল ক্রসিং সড়ক নির্মান করে। ১৯৭১ সালে অর্জিত স্বাধীনতার পর এই লেভেল ক্রসিং সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে বিভিন্ন পণ্যের হকার বসা শুরু করে। পরবর্তীতে হকার সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং তারা ছাউনি দিয়ে বস্তি দোকান তৈরি করে দখলে নেয়।
তাদের দেখা দেখি বহু সুযোগ সন্ধানী মানুষ লেভেল ক্রসিংয়ের ভিতরে যেখানে ফাঁকা পায় সেখানেই ছাউনি দিয়ে দোকান নির্মান করে। বর্তমানে সেখানে কোন ফাঁকা নেই বললেই চলে। বিষয়টি রেলওয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে ট্রেন চলাচল কর্তৃপক্ষের নিকট গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ করা হয় কিন্ত উচ্ছেদ স্থায়ী করার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কিছু দিন পর পর উচ্ছেদের কারনে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে দখলকারিরা।
উচ্ছেদের পরই তারা রেলওয়ে স্থানীয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ফের দখল করে। এমতাবস্থায় ১৭/১৮ বছর পুর্বে পাশের নওগাঁ সদর উপজেলার পাথরকুটা গ্রামের জনৈক সিরাজ নামের এক ব্যক্তি রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় দপ্তর থেকে লেভেল ক্রসিং সড়কের দক্ষিনপাশের পুর্ব মাথায় ৭৫ স্কয়ারফুট জায়গার লাইসেন্স বাগিয়ে নেয় দোকান ঘর নির্মান করার জন্য।
এরপর ওই জায়গার দীর্ঘ দিনের দখলদার সান্তাহার পৌরসভা শহরের মালশন গ্রামের জুতা-স্যান্ডেল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম মিঠুকে সেখান তুলে দেওয়ার চেষ্ট করে, কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়। পরে মিঠুর দখল উচ্ছেদ করার জন্য বগুড়ার আদালতে ১৪৯/১০ নম্বরের একটি অন্য প্রকার মামলা করে। তবে মামলায় হেরে যায় বাদী সিরাজ। পরে আপিল মামলা করলে আদালত সে মামলা নামঞ্জুর করে। এরপরও সিরাজ ফুটপাতের উপর নেয়া লাইসেন্স বলে দোকান ঘর নির্মান করতে মরিয়া হয়ে লড়তে থাকে।
এর এক পর্যায়ে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট রেলওয়ে ভুমি বিভাগ লেভেল ক্রসিং সড়কের দুই পাশের ফুটপাতসহ লেভেল ক্রসিংয়ের ভিতরের কয়েকশত স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এই সুযোগে সিরাজ ওই স্থানে দোকান ঘড় নির্মান করার জন্য সামগ্রী ফেলে। এতে শুরু হয়ে যায় দুই পক্ষে চরম উত্তেজনা। এমন অবস্থা সৃষ্টি হবার পর সেখানে কখনো রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারি, জিআরপি, আরএনবিসহ প্রশাসনের লোকজন হাজির হচ্ছেন আবার কখনো কখনো দুই পক্ষের ভাড়া করা লোকজন হাজির হয়ে হুরহাঙ্গামা সৃষ্টি করছেন।
বিষয়টি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে যে কোন সময় বড় রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এবিষয়ে ওই বিতর্কিত স্থান পাশের রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের মতিন বাজার নামের দোকানের মালিক মতিউর রহমান আকন্দ মতি বলেন, যে জায়গা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে দোকান নির্মানের জায়গা নয়, সেটি জনসাধারণের চলাচলের ফুটপাত সড়ক।
একই বিষয়ে শহরের কলসা মহল্লার বাসিন্দা বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মাসুদ আহম্মেদ চৌধূরী বলেন, সিরাজ হচ্ছে রেলওয়ের জমি লিজ নিয়ে মোটা অংকের টাকায় পজেশন বিক্রেতা। সে শহরে রেলওয়ের জায়গায় প্রায় নয়টি দোকান ঘর এবং সান্তাহার সরকারি কলেজের পাশে রেলওয়ের পাঁচ বিঘা জমি কৃষি লিজ নিয়ে পরে প্লট করে পজেশন বিক্রি করে দিয়েছেন। শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে স্টেশনের সুইচ কেবিন এলাকায় এবিষয়ে আলাপকালে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সিরাজ বলেন, আমি সবই বৈধভাবে নিয়েছি এবং মানবিক কারনে দরীদ্রদের নিকট ছেড়ে দিয়েছি। লাভ-ক্ষতির হিসাব করিনি।