নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পে ধীরগতি অব্যাহত রয়েছে। মাত্র দুই বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন লাগছে প্রায় সাড়ে আট বছর। এতে একদিকে ব্যয় বেড়েছে, অন্যদিকে দেশবাসী বঞ্চিত হচ্ছেন এর সুফল থেকে। প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে এসে আবারও এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে চতুর্থবার মেয়াদ বাড়ানোয় বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) তা খতিয়ে দেখে নয়টি শর্তে অনুমোদনের সুপারিশ করেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির মূল মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু নানা জটিলতায় তা বারবার বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এবার চতুর্থবারের মতো নতুন ব্যয় ছাড়াই মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনে ব্যয় বাড়িয়ে ৩৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা করা হয়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৫৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা আর্থিক অগ্রগতির দিক থেকে ৭৫ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯০ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রকল্প তৈরির সময় সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে জটিলতা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এই প্রকল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। নতুন কাজ শেষ মুহূর্তে যোগ করার প্রয়োজন হলে সেটি শুরুতেই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল। প্রকল্প প্রণয়নের সঙ্গে যুক্তদের গাফিলতিই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
সূত্র জানায়, এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবের পর আইএমইডির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান তরফদার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে নয়টি শর্ত দেন। এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘরের অডিটোরিয়ামের অসম্পূর্ণ কাজ সমাপ্ত করা, লাইট ফিটিং, অডিও-ভিজ্যুয়াল সংস্কার, ওয়াটার বডির উন্নয়ন, আন্ডারগ্রাউন্ড জাদুঘরের জন্য এয়ারকুলার স্ক্র চিলার স্থাপন, ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে স্মৃতিফলক বসানো এবং কার পার্কিং, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন কাজ শেষ করা। এছাড়া আরবরিকালচার ও ল্যান্ডস্ক্যাপিং সম্পন্ন করা, শাহবাগ থানার নির্মাণে নতুন উদ্যোগ নেওয়া, কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রতি তিন মাস অন্তর জমা দেওয়া, অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি, ই-পিআইএমএস হালনাগাদ করা এবং প্রকল্প সভাগুলো নিয়মিত সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, শাহবাগ থানার নতুন ভবন নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও স্থান নির্ধারণ না হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নির্মাণাধীন কাজের সংযোজন-বিয়োজন এবং নতুন কাজ যুক্ত করার কারণে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি।