নিজস্ব প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের উখিয়ার যুবদল নেতা আরফাত চৌধুরী দখল, চাঁদাবাজি, চোরাচালান ও পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে এক বছরে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সমুদ্রপথে মিয়ানমারে নিষিদ্ধ পণ্য পাচার করে বিনিময়ে ইয়াবা আনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছরের ৫ আগস্ট পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর থেকে তিনি গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে যেখানেই দখল বা দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে, সেখানে তার নাম উঠে আসে। এমনকি নিবন্ধন ছাড়াই তিনি উখিয়া ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা করছেন।
উখিয়া উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরফাত চৌধুরী এখন অপরাধ জগতের অঘোষিত সম্রাট হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, পাহাড়কাটা, চাঁদাবাজি, থানায় দালালি, মামলা বাণিজ্য, ভূমি অফিস ও ইউএনও অফিসে প্রভাব বিস্তারসহ পরিবহণ সেক্টরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। তিনি কখনো কলেজ শিক্ষক, কখনো সাংবাদিক, কখনো শ্রমিক নেতা, আবার কখনো যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে নিজের কার্যক্রম বৈধ করার চেষ্টা করেন। স্থানীয়রা তাকে ‘ডাম্পার আরফাত’ নামেও চেনেন। বর্তমানে তিনি ‘লাঠিয়াল বাহিনীর নেতা’ হিসেবেও পরিচিত।
গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় আরফাত চৌধুরীর নাম শীর্ষ চাঁদাবাজ ও দখলবাজ হিসেবে উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, ইনানী পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আটক মোটরসাইকেল ও মাটি পরিবহনের ডাম্পার তিনি লুট করেছেন। উপজেলা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার আশ্রয়ে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এর আগে আওয়ামী লীগ আমলেও তিনি শীর্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় ছিলেন। তাদের সঙ্গে তার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে আছে।
বনবিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আরফাত বিভিন্ন পাহাড় নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রাতের আঁধারে মাটি কেটে বিক্রি করতেন। জালিয়া পালংয়ের দক্ষিণ পাইন্ন্যাশিয়া এলাকায় প্রতিরাতে পাহাড় কাটার উৎসব চলে। এতে বাধা দিতে গেলে একাধিক বন কর্মকর্তা আরফাত ও তার সহযোগীদের হাতে হামলার শিকার হন। বনবিভাগ যতবার অভিযান চালায়, ততবার তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, আরফাতের নেতৃত্বে প্রতিদিন রাতে ডজনখানেক ডাম্পার দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি বহন করা হয়। এসব ডাম্পারের মালিক আরফাত ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা। পাহাড় কাটা ও মাটি বিক্রি বন্ধে বনবিভাগ বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। একবার বনবিভাগের জব্দ করা ডাম্পার ইনানী পুলিশ ফাঁড়িতে রাখার পর আরফাতের বাহিনী সেটি ছিনিয়ে নেয়।
কোটবাজার সিএনজি সমিতির সভাপতি হওয়ার পর তিনি পরিবহণ সেক্টরের টোকেন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নেন। শ্রমিক নেতা হয়ে থানা-পুলিশের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এতে টোকেন বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্য ও শ্রমিকদের সালিশ-বিচার নিয়ন্ত্রণ করে রাতারাতি ধনী হয়ে ওঠেন। পাহাড়কাটা ও পরিবহণ খাত থেকে আয় তাকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, আরফাত একসময় স্বর্ণ চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। উখিয়া থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত উপকূল এলাকা তার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিরাতে বিপুল পরিমাণ দেশীয় পণ্য পাচার হয় এবং বিনিময়ে ইয়াবা ও স্বর্ণ আসে। এই সিন্ডিকেট বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক জমি দখল করেছে।
এছাড়া, আরফাত নিবন্ধন ছাড়াই উখিয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক হয়েছেন। তার একাডেমিক ফলাফল খুবই খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর তদবিরে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, এমন একজন অযোগ্য ব্যক্তি শিক্ষক হলে শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আরফাত সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন অফিস ও আদালতে প্রভাব খাটাচ্ছেন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আরফাত দাবি করেছেন, তিনি কলেজে যোগদানের পর থেকে কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত নন।