১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ফেলানী হত্যার ১ যুগ পর সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবিতে চাকরি পেলেন তার ছোট ভাই আরফান

রবিউল ইসলাম বাবুল, রংপুর  প্রতিনিধিঃ

সীমান্তে নির্মমভাবে নিহত কিশোরী ফেলানীর নাম আজও দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। সেই আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ১ যুগ পেরিয়ে এবার নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো লালমনিরহাটের সীমান্ত এলাকা। ফেলানীর ছোট ভাই অবশেষে চাকরি পেলেন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি)তে।

গত ২৩:ফ্রেরুয়ারী ১৫ ব্যাটালিয়ন আয়োজিত নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ নেয় ফেলানীর ছোটভাই আরফান। পরিক্ষায় ভালো ভাবে উর্ত্তীণ হওয়ার পর বৃহঃপতিবার ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আরফানের হাতে নিয়োগ পত্র তুলে দেন ১৫ বিজিবির ব্যাটালিয়নের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ঈমাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত ফেলানীর ছোট ভাই আরফান বলেন,”আমার বোনকে সীমান্তে যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা শুধু আমাদের পরিবারকেই নয়, গোটা দেশকে কাঁদিয়েছিল। আজ বিজিবিতে চাকরি পেয়ে মনে হচ্ছে, বোনের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।”

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশ ফেরার পথে আমার ছোট নাবালিকা মেয়েকে গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে ভারতীয় বিএসএফ। এখনো সেই হৃদয় বিদারক দৃশ্য চোখের সামনে ভাসলে আমি হউ- মাউ করে কেঁদে ফেলি। সেই নির্মম দৃশ্য আজও ভুলতে পারিনি। কিন্তুু দেশবাসী ও দেশের বিজিবি সবসময় আমাদের পাশে ছিল। তারা আমাকে দোকান করে দিয়ে আমার পরিবার কে সহায়তা করেছে। আজ আমার ছেলে মেধা ও যোগ্যতায় বিজিবিতে সুযোগ পেল। এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।

এ ব্যপারে লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ঈমাম বলেন, বিজিবি সর্বদা ফেলানীর পরিবারের পাশে রয়েছে। ফেলানীর ছোট ভাই নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগ দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রশিক্ষণ শেষে তিনি একজন দক্ষ সদস্য হিসেবে দেশের সেবায় নিয়োজিত হবেন।

উল্লেখ যে,২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে গিয়েছিল ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানীর লাশ। বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছিল। ন্যায়বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ এখনো রয়ে গেছে পরিবারটির। তবে দীর্ঘ সংগ্রামের পর এবার সেই পরিবারের এক সদস্য সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যেও স্বস্তির সঞ্চার হয়েছে।

লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, “ফেলানী হত্যার বেদনা গোটা জাতির। আজ তার ছোট ভাইকে বিজিবিতে চাকরি দিতে পেরে আমরা গর্বিত। আশা করি, সে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবা করবে।”

এলাকাবাসী মনে করেন, ফেলানী হত্যার ১২ বছর পর তার ছোট ভাইয়ের বিজিবিতে যোগদান শুধু একটি চাকরি পাওয়া নয়, বরং এটি প্রতীকী ন্যায়বিচার ও সীমান্ত রক্ষার নতুন বার্তা হিসেবে সকল বিজিবি কে সীমান্ত রক্ষায় আরও উজ্জীবিত করবে বলে তারা মনে করেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top