৪ঠা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিসর্জনে শেষ হলো দুর্গোৎসব

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

বর্ণাঢ্য আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সারাদেশের মতো নীলফামারীতেও বিজয়া দশমীর দিনে নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তদের ঢল নামে। দেবীর চরণে অঞ্জলি প্রদান ও বিজয়ার প্রার্থনার মাধ্যমে পূজার সমাপ্তি ঘটে। এরপর ঢাক-ঢোল, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনিতে মুখর শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জন স্থলে। নারী-পুরুষ, শিশু থেকে প্রবীণ—সব বয়সী মানুষের অংশগ্রহণে রঙিন হয়ে ওঠে বিসর্জনের শোভাযাত্রা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিজয়া দশমীর মূল বার্তা হলো মনের আসুরিক প্রবৃত্তি—কাম, ক্রোধ, হিংসা ও লালসাকে বিসর্জন দিয়ে সত্য, সুন্দর ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। বিশ্বে শান্তি ও মঙ্গল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো হয়।

এর আগে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় ‘সিঁদুর খেলা’। বিবাহিত নারীরা দেবীর চরণে সিঁদুর নিবেদন করেন এবং তা কপালে, গালে ও একে অপরের মধ্যে বিনিময় করেন। সিঁদুরকে তাঁরা দেবীর আশীর্বাদ হিসেবে সারা বছর সংরক্ষণ করেন। এ সময় নারী ভক্তদের পাশাপাশি পুরুষ ভক্তদেরও মধ্যে ছিল আবেগঘন পরিবেশ। দেবীর চরণে প্রণাম করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ কামনা করা হয়।

এ বছর নীলফামারীতে ৮৪৭টি পূজামণ্ডপে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সদরে ২৮২টি, ডিমলায় ৭৬টি, ডোমারে ১০৫টি, জলঢাকায় ১৮২টি, কিশোরগঞ্জে ১২২টি এবং সৈয়দপুরে ৮০টি মণ্ডপে বিসর্জনের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল তৎপর। সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন। জেলা প্রশাসন থেকে প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা কমিটি জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্গাপূজা আরও আনন্দঘন ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে।

ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী, ২০২৫ সালে মা দুর্গা হাতির পিঠে চড়ে মর্ত্যে আগমন করেছেন এবং দোলায় চড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন। শাস্ত্রমতে দেবীর আগমন হাতির পিঠে হলে তা অত্যন্ত শুভ, যা পৃথিবীতে শস্য-শ্যামলতা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top