৪ঠা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিনিয়োগ সংস্থাগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নিল অন্তর্বর্তী সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা দূর করে সহজ করার লক্ষ্যে দেশের সব বিনিয়োগ সংস্থাকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য পৃথক গভর্নিং বোর্ড বিলুপ্ত করে একটি অভিন্ন বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। প্রয়োজনীয় আইনি সংশোধন শেষে অধ্যাদেশ জারি করে বিদ্যমান সব গভর্নিং বডি বিলুপ্ত করে নতুন বোর্ড গঠন করা হবে।

বর্তমানে প্রতিটি বিনিয়োগ সংস্থার গভর্নিং বোর্ডের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা থাকলেও অন্য সদস্যরা প্রায় একই। ভিন্ন সংস্থা হওয়ায় আলাদা বোর্ড মিটিং করতে হয়, যা নিয়মিত হয় না। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে মিটিং হওয়ায় নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটে। উদাহরণ হিসেবে, ২০২০ সালের পর বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। এই বৈঠকেই একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিডার কর্মকর্তারা মনে করছেন, সব সংস্থা একীভূত হলে বোর্ড মিটিংয়ে দীর্ঘ বিরতি আর থাকবে না এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুত হবে। জানা গেছে, নতুন বোর্ডের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান। তবে একীভূতকরণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সংস্থাগুলো তাদের বর্তমান কাঠামো বজায় রেখে কার্যক্রম চালাবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে বিনিয়োগে একাধিক সংস্থা থাকায় বিনিয়োগকারীরা নানা জটিলতা ও হয়রানির মুখে পড়েন। একীভূত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে একজন বিনিয়োগকারী একটি সংস্থার মাধ্যমেই সব ধরনের তথ্য ও সহযোগিতা পাবেন। গত ১৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বিডার বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি অনুমোদিত হয়।

ছয়টি বিনিয়োগ সংস্থাকে একীভূত করার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এগুলো হলো—বিডা, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ (পিপিপিএ) এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। তবে বিসিকের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান একীভূতকরণের বাইরে থাকছে, শুধু সাভারের চামড়া শিল্পনগরীসহ কয়েকটি প্রকল্প যুক্ত হবে।

একীভূত প্রক্রিয়া তদারকির জন্য শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরে অ্যাটর্নি জেনারেলকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত, মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ বিভাগের সচিবসহ আরও অনেকে।

যদিও ইপিজেডে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে একীভূতকরণের বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে, তারা মনে করছেন এতে বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা বাড়বে। তবে বিডার কর্মকর্তারা বলছেন, এই উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের সুবিধা বাড়ানোর জন্যই নেওয়া হয়েছে।

এদিকে একীভূত হলেও বিদ্যমান জনবল কাঠামোয় চাকরি ও আর্থিক নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে জানিয়েছে কমিটি। তবে নতুন সংস্থার নাম কী হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একীভূত প্রক্রিয়ার আইনগত জটিলতা সমাধান ও নতুন অর্গানোগ্রাম প্রস্তুতের জন্য বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top