৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রাজনৈতিক উত্তাপের মাঝে সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন রাষ্ট্রদূতের গোপন বৈঠক

নিজস্ব প্রতিনিধি:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন নর্ডিক তিন দেশের রাষ্ট্রদূত।

ঢাকায় নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে সাবের হোসেন চৌধুরীর নিজ বাসভবনে এই বৈঠকে অংশ নেন। অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র।

সূত্র জানায়, বৈঠকে নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, তা জানতে চান কূটনীতিকরা। এছাড়া কীভাবে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়। নর্ডিক রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিরা যদি অংশগ্রহণের সুযোগ পান, তাহলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকবে এবং বিদেশি কূটনীতিকদের পক্ষ থেকেও তাতে কোনো আপত্তি থাকবে না।

তবে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু প্রকাশ করেননি। এর আগে গত ১১ মে সন্ধ্যায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। সেদিনও আলোচনার বিষয় ছিল আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার উপায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো টালমাটাল। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে এবং দলটি তীব্র অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় দলটি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছে না। এমন প্রেক্ষাপটে সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের এই বৈঠক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, গুলশান-২ এ অবস্থিত তার বাসভবনে বিকেল ২টা ৫৫ মিনিটে বৈঠক শুরু হয়ে চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। রাষ্ট্রদূতরা ফ্ল্যাগবিহীন একটি গাড়িতে করে সেখানে প্রবেশ করেন এবং নজর এড়াতে বিকল্প পথে স্থান ত্যাগ করেন। সচরাচর এমন গোপনীয়তা কূটনৈতিক বৈঠকে অনুসরণ করা হয় না।

সাবের হোসেন চৌধুরী ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তিনি পরে জামিনে মুক্তি পান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক মূলত আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা কেন্দ্রিক ছিল।

উত্তর ইউরোপের নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্ক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ হিসেবে পরিচিত, যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন ও জলবায়ু সহযোগিতা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার এবং টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে এসব দেশের সম্পৃক্ততা দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর। সাবের হোসেন চৌধুরী সাবেক পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে এই দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

এই বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top