নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলের প্রতীক নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের জটিলতা। প্রতীক চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনই নিবন্ধন সনদ পাচ্ছে না দলটি। এনসিপি শুরু থেকেই তাদের প্রতীক হিসেবে শাপলা দাবি করে আসছে, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নতুন গেজেট অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের জন্য নির্ধারিত ৫০টি প্রতীকের তালিকায় শাপলা নেই।
নির্বাচন কমিশন এনসিপিকে গেজেটভুক্ত প্রতীকগুলোর মধ্যে থেকে একটি বেছে নিতে চিঠি দিয়েছে এবং মঙ্গলবার পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এনসিপি জানিয়ে দিয়েছে, শাপলা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক তারা নেবে না এবং এ বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগও রাখবে না।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ইসি যদি শাপলা প্রতীক না দেয়, তবে সেটি হবে স্বেচ্ছাচারী আচরণ। এমন হলে তাদের দল নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে অনাস্থা প্রকাশ করবে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নতুন গেজেটে শাপলা প্রতীক না থাকায় এনসিপিকে সেটি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, যেহেতু গেজেটে শাপলা নেই, তাই এনসিপির সেটি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
গত সপ্তাহে কমিশন ১১৫টি প্রতীক নিয়ে একটি নতুন গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে শাপলা প্রতীক বাদ দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, এনসিপি যদি অন্য প্রতীক গ্রহণ না করে, তাহলে দলটির নিবন্ধন প্রক্রিয়াও স্থগিত হতে পারে।
নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সময় এনসিপি তিনটি প্রতীক—শাপলা, কলম এবং মোবাইল—চেয়েছিল। পরে সংশোধিত আবেদনপত্রে তারা শুধুমাত্র শাপলা, লাল শাপলা বা সাদা শাপলা থেকে একটি প্রতীক দেওয়ার অনুরোধ জানায়। দীর্ঘদিন ধরেই এনসিপির নেতাকর্মীরা শাপলা প্রতীকের দাবিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন।
তবে নির্বাচন কমিশন ৩০ সেপ্টেম্বর এনসিপিকে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে বলা হয় ৭ অক্টোবরের মধ্যে গেজেটভুক্ত ৫০টি প্রতীকের তালিকা থেকে একটি বেছে নিতে হবে। চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, শাপলা বর্তমানে তালিকায় না থাকায় সেটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।
এনসিপি ইমেইলে ইসিকে জবাব পাঠিয়ে জানায়, তারা শাপলা ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক গ্রহণ করবে না। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠির সঙ্গে শাপলার সাতটি ভিন্ন নকশাও সংযুক্ত করা হয়।
এনসিপির দাবি, শাপলা প্রতীক না দেওয়ার পেছনে একটি গোয়েন্দা সংস্থার আপত্তি রয়েছে, যার কারণে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, কমিশন অদৃশ্য চাপে আছে এবং এনসিপিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন জানায়, গেজেট সংশোধন না করা পর্যন্ত শাপলা প্রতীক দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কমিশন যদি নতুন করে আলোচনা করে এবং গেজেটে পরিবর্তন আনে, তখন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।
এমন অবস্থায় সোমবার কমিশনের সামনে ‘বাংলাদেশ ড্রাইভার সমন্বয় পরিষদ জাতীয় ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধন করে, যেখানে তারা ইসিকে শাপলা প্রতীক কোনো রাজনৈতিক দলকে না দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানায়।
শাপলা প্রতীক নিয়ে জটিলতার পেছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নাগরিক ঐক্য দলটি কেটলি প্রতীক পেয়ে নিবন্ধন নেয়। পরে তারা প্রতীক পরিবর্তনের আবেদন জানিয়ে শাপলা বা দোয়েল চায়। সেই আবেদন বিবেচনা করেই ইসি নতুন গেজেট থেকে শাপলা প্রতীক বাদ দেয়।
এনসিপির নিবন্ধন চূড়ান্ত হওয়ার পর এই প্রতীক ইস্যুই এখন বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ইসি যদি এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেয়, তারা মামলা করবে না, তবে আপত্তি জানাবে।
এনসিপির নেতারা মনে করছেন, এই প্রতীক ইস্যুর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাবমুক্ত নয় এবং তারা আইনগত ব্যাখ্যা ছাড়াই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে।
ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে গঠিত এই নতুন দলটি বলছে, শেষ পর্যন্ত যদি শাপলা প্রতীক না পায়, তাহলে তারা নিবন্ধন না নিয়ে রাজপথে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এনসিপি যদি গেজেটভুক্ত কোনো প্রতীক গ্রহণ না করে, তাহলে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যেতে পারে। তবে আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট সমাধানের সুযোগ এখনো আছে। ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী মনে করেন, যদি আলোচনায় সমাধান না হয়, তাহলে এনসিপির আদালতে যাওয়ারও সুযোগ রয়েছে।