নিজস্ব প্রতিনিধি:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কারাগারে বন্দি সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, এখন আর তার মন খারাপ হয় না, জেলজীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। বুধবার ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এসব কথা জানান পলক।
জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর বনানী থানায় শাহজাহান নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে পলকসহ বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদেকুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এরপর তাদের হাজতখানায় রাখা হয়। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মাথায় হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে এজলাসে তোলা হয়।
এ সময় সাংবাদিকরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পলক ‘হ্যাঁ’ সূচকভাবে মাথা নাড়েন। তিনি বলেন, “সব কিছুরই শেষ আছে।” পরে আবারও বলেন, “সব কিছুরই শেষ আছে।”
কাঠগড়ায় থাকা অবস্থায় সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে গোলাম দস্তগীর গাজী সামনের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন, পাশে ছিলেন পলক, রাশেদ খান মেনন ও আতিকুল ইসলাম। তারা আইনজীবীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
পলক তার আইনজীবীকে বলেন, “আমি ভালো আছি, মানসিকভাবে শক্ত আছি, মন থেকে উজ্জীবিত রয়েছি। আগে মন খারাপ থাকলেও এখন আর হয় না, নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি।” তিনি এই সংবাদটি তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান।
এরপর বেলা ১১টা ৮ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক মো. ইয়াছির আরাফাত আসামিদের গ্রেফতার দেখানোর বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, মামলার আসামিরা এজাহারনামীয়। ভিকটিম শাহজাহান বনানী ফ্লাইওভারের নিচে শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশ নেন, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা চালান। শাহজাহান বুকে ও পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে চার দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তদন্ত স্বার্থে আসামিদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়।
আদালত শুনানি শেষে তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর পুনরায় মাথায় হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়।
পলকের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম (সাইফ) জানান, তার মক্কেল শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো আছেন, তবে জেলখানায় প্রাপ্য সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে এক আওয়ামী লীগ নেতা জেলেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন, এ কারণে পলক উদ্বিগ্ন ছিলেন, তবে এখন মানসিকভাবে দৃঢ় অবস্থানে আছেন।”
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বনানী থানাধীন মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে শাহজাহান নামে এক কারখানার কর্মী শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশ নেন। সে সময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। গুলিবিদ্ধ শাহজাহান চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান। পরে ১৮ ডিসেম্বর শাহজাহানের মা সাজেদা বনানী থানায় ৯৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।