১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নোবেল শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন না ট্রাম্প, আতঙ্কে নরওয়ে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে একটি বিষয় প্রায় নিশ্চিত—যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবারও পুরস্কার পাচ্ছেন না। যদিও তিনি বহুবার এ পুরস্কারের দাবি তুলেছেন, তবুও বিশেষজ্ঞদের মতে, নোবেল কমিটি তাকে বেছে নেবে না।

নরওয়ের রাজধানী অসলোতে অবস্থিত নোবেল কমিটি শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় (০৯০০ জিএমটি) বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে। তবে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশটিতে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নরওয়ের সোশ্যালিস্ট লেফট পার্টির বৈদেশিক নীতির মুখপাত্র বলেন, “ট্রাম্প যে কোনো কিছু করতে পারেন, তাই আমাদের সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

বিশ্ব এখন নানা সংঘাতে জর্জরিত। ১৯৪৬ সালে সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক সংঘাতের তথ্যভান্ডার তৈরি শুরু করে। সেই তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সশস্ত্র সংঘাতের সংখ্যা ছিল ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি অন্তত আটটি সংঘাতের সমাধান করেছেন এবং এজন্য তিনি শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। তবে সুইডেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক পিটার ভ্যালেনস্টিন স্পষ্টভাবে বলেন, “না, এ বছর ট্রাম্প নোবেল পাচ্ছেন না।”

তিনি আরও বলেন, “সম্ভবত আগামী বছরে দেখা যাবে তার উদ্যোগগুলো কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, বিশেষ করে গাজা সংকটের ক্ষেত্রে।”

অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার মনে করেন, ট্রাম্পের নীতি ও কর্মকাণ্ড নোবেল পুরস্কারের মূল নীতির পরিপন্থি। তিনি বলেন, “নোবেলের উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জাতির ভ্রাতৃত্ব ও নিরস্ত্রীকরণ উৎসাহিত করা। কিন্তু ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো সে ধারার বিপরীত।”

ট্রাম্প তার ক্ষমতার সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহুপাক্ষিক চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছেন, মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, এমনকি গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকিও দিয়েছেন। এছাড়া তিনি মার্কিন শহরগুলোতে সেনা মোতায়েন করেছেন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও একাডেমিক স্বাধীকারে হস্তক্ষেপ করেছেন।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেন, “আমরা কোনো ব্যক্তির সম্পূর্ণ ভূমিকা বিবেচনা করি। মূল বিষয় হলো, তিনি বাস্তবে শান্তির জন্য কী অর্জন করেছেন।”

এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮ ব্যক্তি ও সংস্থা মনোনীত হয়েছে, তবে তালিকাটি ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হবে। মনোনয়ন দিতে পারেন সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, আগের বিজয়ীরা ও নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা।

২০২৪ সালে শান্তি পুরস্কার পেয়েছিল জাপানের পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন ‘নিহোন হিদানকিও’।

এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে সুদানের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’, রুশ নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া, এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা অফিস ফর ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস।

নরওয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক হালভার্ড লেইরা বলেন, “নোবেল কমিটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শান্তির মূল ধারণার দিকে ফিরে এসেছে। মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন তাদের মূল অগ্রাধিকার।”

তিনি আরও বলেন, “আমার ধারণা, এ বছর এমন একজন প্রার্থী বিজয়ী হবেন, যিনি বিতর্কের বাইরে এবং বাস্তব অর্থে শান্তির প্রতীক।”

তবে অনেকে মনে করছেন, নোবেল কমিটি আগের মতো এবারও সবাইকে চমকে দিতে পারে—একজন সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top