মোঃ ফাহিম,পবিপ্রবি প্রতিনিধি:
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের জাতীয়তাবাদী চেতনার দুটি সংগঠন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) পবিপ্রবি কর্তৃক শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদের নতুন কমিটিকে স্থগিতাদেশ দিয়েছে; পাল্টা এসেছে প্রতিবাদলিপি।
জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর পরবর্তী সময়ে জাতীয়তাবাদী চেতনার শিক্ষকদের মধ্যে সক্রিয় কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। তবে দেখা গেছে, একই ভাবধারার দুটি ভিন্ন সংগঠন এখন পরস্পরের বিরোধী অবস্থানে রয়েছে।
পবিপ্রবির বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)-এর সভাপতি বেসিক সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশিদ এবং সাধারণ সম্পাদক কীটতত্ত্ব (এন্টোমোলজি) বিভাগের অধ্যাপক ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান।
গত ৩০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে পবিপ্রবিতে একই ভাবধারার সংগঠন শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। উক্ত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. বদিউজ্জামানকে এবং সদস্য সচিব হন কৃষি অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. ইকতিয়ার উদ্দিন।
অপরদিকে, ৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কনফারেন্স কক্ষে ইউট্যাব কর্তৃক অনুষ্ঠিত এক সভায় “শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদ” নামে সংগঠনটির বৈধতা বিষয়ে পত্র প্রেরণসহ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত দলীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সংগঠনটির কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আর এই স্থগিতাদেশ নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক।
জিয়া গবেষণা পরিষদের শিক্ষকদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ব্যতীত এভাবে একটি সংগঠন অপর একটি সংগঠনকে স্থগিতাদেশ দিতে পারে না।
এর পাল্টা জবাবে “শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদ” ১০ অক্টোবর তারিখে পবিপ্রবি ইউট্যাব শাখার সিদ্ধান্তকে অসাংগঠনিক বলে আখ্যা দিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবাদলিপি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইউট্যাব পবিপ্রবি শাখার নেতৃবৃন্দ কর্তৃক সম্পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে একই ভাবধারার একটি সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিতের মতো বেআইনি ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত দলীয় ঐক্য বিনষ্টসহ আগামী সাধারণ নির্বাচনে সাধারণ জনগণকে দারুণভাবে বিভ্রান্ত করবে।
পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনিসুর রহমান আনিস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক তালুকদারসহ সংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে পবিপ্রবির গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর মুক্তবুদ্ধির চর্চার বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘৃণ্য সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পবিপ্রবিতে জাতীয়তাবাদের রাজনীতি চর্চার বিরুদ্ধে এ ধরনের অগণতান্ত্রিক আচরণ দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
জানা যায়, কেন্দ্রীয় কমিটিকে কোনো রকম অবহিত না করেই শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদের স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত নেয় ইউট্যাব পবিপ্রবি ইউনিট। এ বিষয়ে ইউট্যাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “আমি এই বিষয়ে অবগত নই, আপনাদের কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম। এমনকি যে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও আমি জানতাম না। যারা এই স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।”
অন্যদিকে, শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদের বৈধতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আনিসুর রহমান আনিস বলেন, “১৯৯৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদের উদ্বোধন করেছেন, সকল ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে। শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদের বৈধতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, সেটা জ্ঞানবহির্ভূত কথা ছাড়া কিছু নয়।”
এ সময় তিনি ইউট্যাব পবিপ্রবি ইউনিটের সমালোচনা করে বলেন, “একটা সংগঠন অন্য সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করতে পারে না—এই অধিকার তাদের নেই। অন্য সংগঠন আমার সংগঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ওনারা হয়তো শিক্ষক হিসেবে ভালো, কিন্তু সাংগঠনিক ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান নেই।”