মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে নীলফামারীতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নীলফামারী জেলা শাখা।
রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা জামায়াত কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমরা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেছি। জনগণ আজ ভোটাধিকার ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর আলোকে একটি নতুন নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।”
তিনি আরও বলেন, “‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর আলোকে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আয়োজন করতে হবে এবং জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতি চালু করে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।”
অধ্যক্ষ সাত্তার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “ফ্যাসিবাদী সরকারের দমননীতি, জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির কারণে দেশের গণতন্ত্র আজ গভীর সংকটে। এসব অপরাধের ন্যায়বিচার না হলে জনগণের আস্থা কখনোই ফিরে আসবে না।”
স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতীফ, জেলা অফিস সম্পাদক আব্দুল কাদিম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি মনিরুজ্জামান জুয়েল, জেলা প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি ছাদের হোসেনসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
জেলা জামায়াতের পক্ষে পড়ে শোনানো পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো—
১.জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন;
২.জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতি চালু;
৩.অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত;
৪.বর্তমান সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার নিশ্চিত করা;
৫.স্বৈরাচারপন্থী দলসমূহ, বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা।
জুলাই জাতীয় সনদ হলো জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত একটি রাজনৈতিক রূপরেখা, যেখানে দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী কাঠামো, প্রশাসনিক সংস্কার ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসন ব্যবস্থার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। দলটি সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কর্মসূচি পালন করছে।
নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এ কর্মসূচি সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, এই সনদ বাস্তবায়ন হলে দেশের রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য ও ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।