১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পরিবার নিয়ে সাত দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে প্রতিবন্ধী লাল মিয়া

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি:

ঝড়ের রাতে বিছানায় ঘুমোচ্ছিলেন লাল মিয়া। হঠাৎ প্রবল শব্দে চোখ খুলতেই দেখেন, টিনের ছাউনি উড়ে গিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ছোট্ট ঘরটি। এখন পরিবার নিয়ে সাত দিন ধরে খোলা আকাশের নিচেই কাটছে এই প্রতিবন্ধীর দিনরাত।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম বানিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া (৪০) শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। স্থানীয় লুৎফর রহমানের ছেলে তিনি। দুই সন্তানের পিতা লাল মিয়া নিজে কোনো কাজ করতে পারেন না। সংসারের একমাত্র ভরসা তার স্ত্রী আনুফা বেগম, যিনি স্থানীয় একটি কারখানায় দিনমজুরের কাজ করেন। কিন্তু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে তিনি কাজেও যেতে পারছেন না।

রোববার (১২ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝড়ে উড়ে যাওয়া ঘরের পাশে একটি ছেঁড়া টিনের নিচে বসে আছেন লাল মিয়া। পাশে ছোট দুই সন্তান—একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ধুলোবালিতে ভরা ভাঙা বিছানা, ছিন্নবস্ত্র, ভাঙা চেয়ার-টেবিল পড়ে আছে চারপাশে। সূর্য ওঠার পর কুয়াশা আর শীতের হিমেল বাতাসে কাঁপছে পরিবারটি।

প্রতিবন্ধী লাল মিয়া জানান,“আমি কিছুই করতে পারি না। ঘরটা পুরো উড়ে গেছে। এখন থাকার জায়গা নাই। সাত দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে আছি। কেউ যদি একটু সাহায্য করত, তাহলে ঘরটা ঠিক করে থাকতে পারতাম।”

তার স্ত্রী আনুফা বেগমের চোখে অশ্রু ঝরছে। তিনি বলেন, “বাচ্চারা ঠান্ডায় কাঁপে, রাতে ঘুমাতে পারি না। কাপড়চোপড়, বইখাতা সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন রান্না করার জায়গাও নেই। সমাজের কেউ সাহায্যের হাত বাড়ালে আবার ঘরটা গড়তে পারব।”

স্থানীয়রা বলেন, “লাল মিয়া আমাদের গ্রামের সবচেয়ে অসহায় মানুষ। তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম, আর তার স্ত্রী দিনমজুর। ঝড়ে ঘর উড়ে যাওয়ার পর থেকে পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে আছে। প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া ওদের পক্ষে ঘর মেরামত করা সম্ভব নয়।”

গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জোনাব আলী বলেন, “বিষয়টি আমি জানি। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরিবারটিকে দ্রুত সহায়তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, “ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে আমরা তালিকাভুক্ত করেছি। লাল মিয়ার পরিবারও সহায়তার আওতায় আসবে। জরুরি সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

এদিকে, গত ৫ অক্টোবর সকালে জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক মিনিটের প্রবল ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পশ্চিম দলিরাম বানিয়াপাড়া, পূর্ব দলিরাম, মোল্লাপাড়া ও ধলাগাছ এলাকায় অন্তত ৭০টি পরিবারের ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ফসলি জমির ধান, ভুট্টা, কলা, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা ও দোকানপাট, পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কয়েকটি গ্রামে।

ক্ষতিগ্রস্ত লাল মিয়া ও তার পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিবেশীরা মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে সহায়তা করলেও স্থায়ী সমাধান আসছে না। স্থানীয়রা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top