২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রাজবাড়ীতে বিআরটিএ অফিসে দালালদের দৌরাত্ব ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রকাশ্যে মারপিট

মোঃ আমিরুল হক, রাজবাড়ী প্রতিনিধি:

ঘুষ-দুর্ণীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজবাড়ী কার্যালয়। এখানে দালাল ছাড়া কোন কাজ হয় না এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুদক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে শুরু হয় আবার কার্যক্রম। চাহিদা মতো অর্থ ছাড়া ফাইল নড়ে না। সেবাগ্রহিতাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। টাকা নেওয়ার পরও কাজ না হলেও ফেরত দেওয়া হয় না কোন অর্থ। প্রতিবাদ করলেই হতে হয় দালালদের হাতে লাঞ্ছিত। এ যেন নৈমিত্তিক দিনের ঘটনা। তবে প্রশাসনের চোঁখে পড়ে না এসব অনিয়ম-দুর্ণীতি।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০ টার সময় রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর মোঃ আক্রামুজ্জামান কাছে টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় এলাকার মোঃ সুমন শেখ।

মারধরের শিকার মোঃ সুমন শেখ অভিযোগ করে বলেন, এক বছর আগে কাগজের জন্য সাড়ে আট হাজার টাকা জমা দেই বিআরটিএর দালাল আকরাম হোসেনের নিকট। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার কাগজ নিতে বিআরটিএতে আসলে আক্রারামুজ্জা আমার কাছে ব্যাংক স্লিপ চায়। এসময় এক বছর আগের স্লিপ, আপনার কাছে জমা দিয়েছি, এখন কোথায় পাবো, বললে থাপ্পর মারে। এ সময় প্রতিবাদ করলে আকরাম হোসেন সহ তার সাথে থাকা ৪-৫জন এলোপাথারী ভাবে মারধর শুরু করে। টাকা দিয়ে কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে এভাবে মারতে পারে না। আমি বিচার চাই।

মোঃ বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভারী থেকে হালকা করার জন্য আকরাম হোসেন ৮ হাজার টাকা দাবী করে। তাকে ৬ হাজার টাকা প্রদান করার পরও আজ ২ বছর ধরে আজকাল করে ঘোরাচ্ছে।

জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে গত ৭ মে অভিযান পরিচালনা করে দুর্ণীতি দমণ কমিশন (দুদক)। এ অভিযানে দালাল চক্রের মূলহোতা রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার কাজীবাঁধা বেথুলিয়া গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে আক্রামুজ্জামান, দালাল চরলক্ষীপুর গ্রামের আব্বাস আলী খানের ছেলে আশিক খান, গোপিনাথদিয়া গ্রামের রহমত আলীর ছেলে লিয়াকত আলী, কাজীকান্দা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে মুনছুর আহমেদকে গ্রেপ্তার করে।

এ অভিযান পরিচালনা করে দুর্ণীতি দমণ কমিশন (দুদক) ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজ।

দুর্ণীতি দমণ কমিশন (দুদক) ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজ বলেন, রাজবাড়ী বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তি ও নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে বিআরটিএ অফিসের সিল কন্ট্রাক্টর আকরামুজ্জামানের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৮০ টাকা, দালাল আশিক খানের কাছ থেকে ৩৩ হাজার ১শত টাকা, দালাল লিয়াকত আলীর কাছ থেকে ১৪ হাজার ২শত ৪০ টাকাসহ মোট ৭২ হাজার ৪ শত ২০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্টন্সপোর্ট অথোরিটি (বিআরটিএ) অফিসের কর্মকর্তাকে নিয়মিত মামলা দায়ের করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের কতিপয় দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ড্রাইভিং লাইসেন্স সেবা নিতে আসা গ্রহিতাদেরকে নানা ভাবে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছে। টাকা ছাড়া কেউ লাইসেন্স করতে পারে না। আর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের নেতৃত্বে লিয়াকত আলী জেলার প্রতিটি এলাকায় দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এ সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসলেও তাদেরকে ফেল করানো হয়। ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়।

একজন লাইসেন্স সেবাগ্রহিতা বলেন, ৩বার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দেই। তিনবারই ফেল করানো হয়। পরে একজন দালাল আমার নিকট থেকে ১৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন প্রায় দেড় বছর যাবৎ ঘুরছি। আমার কাজও করে না, আবার টাকাও ফেরত দেয় না। টাকা চাইলে উল্টো হুমকি দেয়।

এদিকে, সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামান রাজবাড়ী শহরের ২নং বেড়াডাঙ্গা এলাকায় গড়ে তুলেছেন দ্বিতীয় তলা জমিসহ আলিশান বাড়ী। জাপানি টয়োটা প্রাইভেটকার, সজ্জনকান্দায় এক কোটি ২৬ লক্ষ টাকায় কেনা দ্বিতল ভবনসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
অভিযুক্ত রাজবাড়ী বিআরটিএর সিল কন্ট্রাক্টর আক্রামুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রাজবাড়ী বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, আক্রামুজ্জামান বিআরটিএর কেউ নয়, তিনি একজন বহিরাগত। সেবাগ্রহিতাকে মারধরের বিষয়টি এডিএম স্যার আমাকে অবগত করেছেন। আমি বাইরে আছি, পরে কথা বলবো।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top