২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

তুরস্কের অনুরোধে গাজা ছাড়ার অনুমতি পেলেন হামাস নেতা হানিয়ার পরিবারের সদস্যসহ ৬৬ জন

নিজস্ব প্রতিনিধি:

তুরস্কের অনুরোধে চলতি মাসের শুরুতে অন্তত ৬৬ জন ফিলিস্তিনি ও তুর্কি নাগরিককে গাজা উপত্যকা ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে ইসরাইল। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার পরিবারের ১৬ জন সদস্য।

দুই দেশের কূটনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসেবে ১৪ জন তুর্কি নাগরিক এবং তাদের ৪০ জন নিকটাত্মীয়—যাদের মধ্যে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান, পিতা ও মাতা রয়েছেন—গাজা থেকে বের হওয়ার সুযোগ পান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুটি পৃথক কূটনৈতিক সূত্র।

এই সিদ্ধান্ত আসে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে হওয়া গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর, যেখানে তুরস্ক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং হামাসকে আলোচনার টেবিলে আনতে সহায়তা করেছিল। হানিয়ার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পাঁচজন তুর্কি নাগরিকের আত্মীয়ও ছিলেন।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে তেহরানে ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসমাইল হানিয়া ছিলেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান। তুরস্কের সঙ্গে হামাসের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যদিও দেশটিতে সংগঠনটির কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যালয় নেই। হামাসের নেতারা কাতার, তুরস্ক, মিসর ও লেবাননের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করেন এবং অনেকেই তুরস্কে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন। ২০২০ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছিল, তুরস্ক ইসমাইল হানিয়াসহ কয়েকজন হামাস নেতাকে নাগরিকত্ব প্রদান করেছিল।

ইসরাইল সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা অপ্রত্যাশিত হিসেবে দেখছেন। কারণ, গত এপ্রিলে ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজায় হানিয়ার তিন ছেলে ও চার নাতি নিহত হন। একই সময়ে ইসরাইল দক্ষিণাঞ্চলের টেল শেভা শহরে বসবাসরত হানিয়ার বোন সাবাহ আল-সালেম হানিয়াকেও গ্রেফতার করেছিল।

ইসরাইলি কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, এই পদক্ষেপ আসলে তেল আবিবের পক্ষ থেকে আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় উষ্ণ করার কূটনৈতিক প্রয়াসেরই প্রতিফলন।

গাজা যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরাইলি গণমাধ্যমে তুরস্কের নেতৃত্বের প্রতি তুলনামূলকভাবে নরম মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ইয়নেট তাদের এক প্রতিবেদনে তুর্কি গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিনকে ‘জিম্মিদের প্রতি সহানুভূতিশীল’ এবং ‘ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে আগ্রহী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ইসরাইলি সাংবাদিক বেন ক্যাসপিট মারিভ পত্রিকায় লেখেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগান বরাবরই ইসরাইলের সমালোচক হলেও তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানকে ইসরাইলের নিরাপত্তা মহল আরও বাস্তববাদী হিসেবে দেখে।

একই পত্রিকায় প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে ইসরাইলি চেম্বার অব কমার্স ফেডারেশনের সভাপতি উরিয়েল লিন বলেন, গাজার পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে তুরস্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইলের উচিত এরদোগানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা।

তিনি আরও বলেন, তুরস্ক কখনোই ইসরাইলের শত্রু ছিল না। দুই দেশের মধ্যে বহু বছর ধরে ফলপ্রসূ বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও পর্যটন সম্পর্ক বিদ্যমান। তিন বছর আগে ৬৫টি ইসরাইলি কোম্পানির একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে তুরস্ক সফরে গিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তার মতে, ইসরাইলের পররাষ্ট্রনীতি যেন হঠকারী সিদ্ধান্তের বদলে বিচক্ষণতার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সংযম বজায় রাখারও প্রশংসা করেন।

উরিয়েল লিন বলেন, তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারই ইসরাইলের নতুন পররাষ্ট্রনীতির বাস্তব পরীক্ষা। এটি কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য নয়, বরং অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top