নিজস্ব প্রতিনিধি:
গাজীপুর জেলা বিএনপিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী। আন্দোলন-সংগ্রামের সময় তার কোনো উপস্থিতি না থাকলেও গত বছর ৫ আগস্টের পর তিনি জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদ—সদস্য সচিব—পেয়ে যান। এরপর থেকেই তিনি সংগঠনের ভেতরে ও বাইরে প্রভাব বিস্তার করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও হাইব্রিড সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিভিন্ন পকেট কমিটি গঠন করেছেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে তিনি ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তার করছেন। যার ফলে এলাকায় দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ভেঙে পড়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭ থেকে ১২নং ওয়ার্ডজুড়ে এখন বিএনপির ভেতর গভীর ক্ষোভ ও বিভাজন।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিএনপির অনেক নেতা মামলা-হামলার শিকার হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন, কিন্তু সেই সময় ইশরাক কোথাও ছিলেন না। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের পর হঠাৎ করেই তিনি নেতৃত্বে চলে আসেন এবং নিজের বলয় গড়ে তোলেন। তার নেতৃত্বে বিএনপির পুরোনো, ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন, যা সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রার্থী করলে শুধু গাজীপুর-১ আসনেই নয়, সারা দেশে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, জনপ্রিয় নয় এমন নেতাকে মনোনয়ন দিলে দলের পরাজয় অনিবার্য। এতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা নিরুৎসাহিত হবেন এবং দলের ভেতরে বিভাজন বাড়বে।
গত ২৭ মার্চ কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌর বিএনপির পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে একটি আবেদন পাঠানো হয়। সেখানে অভিযোগ করা হয়, ইশরাক সদস্য সচিব হওয়ার পর দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে নিজের স্বার্থে মাদকাসক্ত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। আবেদনে বলা হয়, ইশরাকের নেতৃত্বে এখন দলে অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা বাড়ছে, যা সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
তৃণমূল নেতারা জানান, ইশরাকের পছন্দের অনেক নেতা অতীতে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাদের নৌকা প্রতীকের ব্যাজ গলায় ঝুলিয়ে রাখা ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা বিব্রত ও ক্ষুব্ধ।
কালিয়াকৈর পৌর শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগপন্থিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। এতে বিএনপির ঐক্য ভেঙে পড়েছে। একই অভিযোগ করেছেন গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি রফিকুল ইসলামও।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। বিএনপির কমিটিতে কোনো আওয়ামী লীগ বা হাইব্রিড নেতা নেই। আমি কাউকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করি না, সবাইকে নিয়েই দল গঠন করেছি।”
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করে, ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীকে ঘিরে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা গাজীপুর বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিকে দুর্বল করছে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।