২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

শ্রেণিকক্ষে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: কালিহাতীতে শিক্ষক গ্রেপ্তার, মানবতার জাগরণে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী

গৌরাঙ্গ বিশ্বাস,বিশেষ প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বাংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে গেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। কোমলমতি এক তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী শ্রেণিকক্ষেই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে তারই শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বুলবুল (৪৬)-এর হাতে।
মানবতার চরম অবক্ষয়ের এই ঘটনায় শিক্ষক সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। এলাকাজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৭ অক্টোবর দুপুরে ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষক বুলবুল নিজের শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীটিকে ডেকে এনে প্রথমে তার হাত ধরেন এবং পরে উরুতে হাত দেন— যা শিশুটির কোমল মনে গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি করে। ভয়ে, লজ্জায় এবং সামাজিক চাপে ছাত্রীটি প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখলেও বাড়ি ফিরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ফুফু ও চাচীর কাছে ঘটনাটি খুলে বলে।
ঘটনাটি জানাজানি হতেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে।

এরপর ৯ অক্টোবর বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্বাক্ষরে মোট ১০৮ জন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন।অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন সত্যতা যাচাইয়ের জন্য।
পরে তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির পিতা বলেন, আমি প্রথমে শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, শিক্ষক সমাজ নিজেরাই শাস্তি দেবে। কিন্তু একজন শিক্ষকের মুখে যখন এমন কলঙ্ক লেগে যায়, তখন নীরব থাকা পাপ। তাই আমি শেষ পর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হই।

এ বিষয়ে কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার বিষয়টি জানার পর আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। শিশুটির পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে মামলা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্ত শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বুলবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আমরা এই মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। শিশুর প্রতি যে কোনো ধরনের নির্যাতন বা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কালিহাতী থানা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে। সমাজে শিক্ষক নামের এমন নরপিশাচদের কোনো স্থান নেই— আমরা চাই, এই ঘটনাই হোক একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সূচনা। এদিকে, ঘটনার পর এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকে শ্রেণিকক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কালিহাতী উপজেলা শাখার সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক শাহ আলম এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন শিক্ষক হলেন আলোর দিশারি। তাঁর কাছেই শিশুরা নিরাপত্তা ও স্নেহের আশ্রয় খুঁজে পায়। অথচ আজ সেই শিক্ষকই যখন শিকার করে নির্দোষ এক শিশুকে, তখন মানবতা কাঁদে, বিবেক স্তব্ধ হয়ে যায়। আমরা চাই— শুধু এই শিক্ষক নয়, যারা এমন নিকৃষ্ট কাজকে প্রশ্রয় দেয় বা গোপন রাখে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো মানেই আজ শিশুদের পাশে দাঁড়ানো।

তিনি আরও যোগ করেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কালিহাতী উপজেলা শাখা ইতিমধ্যে ঘটনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের নিরাপত্তা জোরদার ও নৈতিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top