ইমতিয়াজ উদ্দিন, জবি প্রতিনিধি:
‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান, স্বপ্ন জয়ে অটল প্রাণ’—এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) দিবস ২০২৫ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৭ অক্টোবর ২০২৫ (সোমবার) পালিত হয়েছে। দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল র্যালি, চারুকলা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠান।
সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের শুভ উদ্বোধন করা হয়। পরে উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পর উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড় ও ভিক্টোরিয়া পার্ক পরিক্রমা করে পুনরায় ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়।
র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন অনুষদ, ইনস্টিটিউট, বিভাগ ও দপ্তরের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ ব্যানারসহ অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শহিদ সাজিদ ভবনের নিচতলায় চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম ২০২৫’ শীর্ষক চারুকলা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী। উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
এতে চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল শিল্পকর্ম, চিত্র এবং আলোকচিত্র প্রদর্শিত হয়, যা উপস্থিতদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার ফলে আজ আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা শিক্ষা ও গবেষণামূলক কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করতে পারছি। গত এক বছরে আমাদের অর্জন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাই ভালোভাবে অবগত। আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বাজেট ছিল অত্যন্ত সীমিত; বর্তমানে সেই বাজেট উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আগামীতে আমরা একাডেমিক উৎকর্ষের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অগ্রগতির জন্য কাজ করব। নিয়মিত ক্লাস মনিটরিং সিস্টেম অব্যাহত থাকবে এবং ফলাফল প্রকাশে যেন অযথা বিলম্ব না হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের গবেষণা সহকারী হিসেবে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা গবেষণার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
তিনি বলেন, শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গবেষণা সপ্তাহ’ আয়োজন করা হবে, যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের জন্য গবেষণায় উৎসাহ জোগাবে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন সময়সাপেক্ষ হলেও আমরা এই সমস্যার সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করছি; আশা করছি আগামী বছরের মধ্যে আংশিক সমাধান সম্ভব হবে। সবশেষে তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি ও মর্যাদা রক্ষায় আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপই হবে আন্তরিকতার সঙ্গে, আর সেই প্রচেষ্টায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী—সবার সম্মিলিত প্রয়াসই হবে আমাদের প্রধান শক্তি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ মোশাররাফ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন।
ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করে যাবো—এই প্রত্যাশাই আজকের দিনে আমাদের সবার অঙ্গীকার হওয়া উচিত। গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে আংশিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, এবং আরও বিস্তৃত সমাধানের জন্য কাজ চলছে। এইসব নতুন উদ্যোগ ও সংস্কারমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমাগত উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা ও সহযোগিতাই জবিকে আরও সমৃদ্ধ, আধুনিক ও গৌরবময় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সংখ্যা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এজন্য শিক্ষার্থী সহায়তায় তহবিল গঠন, হেরেসমেন্ট প্রতিরোধে ‘কুইক রেসপন্স সিস্টেম’ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জবি শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ শেখ গিয়াস উদ্দিন, সহ-সঞ্চালনায় ছিলেন সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বুশরা জামান।
এছাড়াও বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কর্মচারী ও সহায়ক কর্মচারী সমিতির প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ‘জুলাই বিপ্লব–২০২৪ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ (সুযোগ–সমস্যা–উত্তরণ)’ শীর্ষক প্রবন্ধ সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করেন উপাচার্যসহ অতিথিবৃন্দ।
দিবসটি উপলক্ষ্যে গত বছর ২০২৪ সালে ও এ বছর ২০২৫ সালে আয়োজিত ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী’-তে অংশগ্রহণকারী বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।