নিজস্ব প্রতিনিধি:
বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঝুঁকতে দেখে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতার প্রেক্ষিতে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, কোনো তৃতীয় দেশের প্রভাবে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুর্বল হবে না।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসাডরস’ (আউফা) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক জনগণের কল্যাণের জন্য এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণ স্বাধীন। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নির্দেশনা বা প্রভাবের কারণে এ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীন ও আত্মনির্ভর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করি। এটি অতীতের সরকারগুলোরও নীতি ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ নিজস্ব শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখবে। চীন সেই অবস্থানকেই সমর্থন করে।”
বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চীনে সফর এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতার কথাও উল্লেখ করেন। ইয়াও ওয়েন বলেন, “এই সম্পর্ক জনগণের স্বার্থ ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে নয়। নির্বাচনের পরও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং আরও টেকসই হবে।”
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চীনের একার পক্ষে সম্ভব নয়, এটি অত্যন্ত জটিল এবং এতে অনেক পক্ষ জড়িত। চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে, তবে এটি চীনের সক্ষমতার বাইরে।”
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইয়াও ওয়েন জানান, এই প্রকল্পে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে এবং সম্পন্ন হতে সাত থেকে আট বছর সময় লাগবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জনগণের জন্য প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেপ্টেম্বর মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর চীনা বিশেষজ্ঞরা কাজ শুরু করেছেন।”
এ ছাড়া চট্টগ্রামে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানান তিনি। তার ভাষায়, “৩০টি চীনা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ১০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যে সব নথিপত্র সম্পন্ন হবে এবং ডিসেম্বরেই অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে।”
বাংলাদেশ–চীন–পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, সার্ক কার্যকর না থাকায় এই ত্রিদেশীয় সুসম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।
চীনের প্রেসিডেন্টের ঘোষিত বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগ (জিজিআই) সম্পর্কে তিনি বলেন, “বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক আইনকে সুরক্ষা দেওয়া জরুরি। এক দেশের নীতির কারণে বিশ্বে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। তাই আমরা বৈশ্বিক আইনের শাসন বজায় রাখতে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় জিজিআই প্রস্তাব এনেছি।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন আউফার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আহসান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের মহাসচিব গাউসুল আজম সরকার।