২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

মৌলভীবাজারে হত্যাকাণ্ডের পর মিথ্যা মামলার শিকার পরিবারের অভিযোগ

মামুন, মৌলভীবাজার প্রতিবেদক:

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হিলালপুর এলাকার এক পরিবার অভিযোগ করেছে যে, তাদের পরিবারের সদস্যকে হত্যার পর আসামিরা জামিনে বের হয়ে এসে এখন উল্টো তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। পুলিশ প্রশাসন থেকেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন নিহতের ভাই মো. কয়েছ মিয়া।

তিনি বলেন, “আমার ভাই পারভেজ মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার পর ওই মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আমাদের পরিবারকে হয়রানি করছে। প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর পরও আমরা কোনো ন্যায্য সহযোগিতা পাইনি। বরং পুলিশই আমাদের উল্টো মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করেছে।”

কয়েছ মিয়ার অভিযোগ অনুযায়ী, হিলালপুর গ্রামের মৃত আহাদ মিয়ার ছেলে আজাদ মিয়া, সামাদ মিয়া, ছালিক মিয়া, ফয়ছল মিয়া, রনি, রিয়াদ, তাজেল, সুফন, আলম, মাকুম, আলী, মন্টু, সিপন, স্বপ্না বেগম, রেনা বেগম, ফারুক মিয়া, সানি মিয়া, বলদা, মিতা বেগম, রাহি মিয়া, জাকির, জলাল মিয়া, ইমরান, আফছানা বেগম, রিপন মিয়া, ছুরত মিয়া প্রমুখ ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে পারিবারিক বিরোধে জড়িত।

তিনি জানান, পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা থেকেই মূল বিরোধের সূত্রপাত। মৃত রুবেল মিয়ার স্ত্রী আফছানা বেগমকে রুবেলের ভাইপো সামাদ মিয়া গোপনে বিয়ে করলে বিষয়টি এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে হিলালপুরে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিবাদীরা অশালীন আচরণ করে। এক পর্যায়ে সামাদ মিয়া ধারালো দা দিয়ে পারভেজ মিয়ার পেটে কোপ দিলে গুরুতর জখম হন। পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এই ঘটনায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়। তবে মামলার আসামিরা কয়েক মাসের কারাভোগ শেষে জামিনে বের হয়ে এসে আবারও হামলা, ভাঙচুর ও মিথ্যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে পরিবারটিকে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েছ মিয়া।

তিনি আরও জানান, “মার্ডার মামলার আসামি শিপন মিয়ার স্ত্রী শামীমা খাতুন আমাদের বিরুদ্ধে সিআর ৭১২ নং মামলা দায়ের করেন, ফারুক মিয়া দায়ের করেন সিআর ৯১৭ নং মামলা, এবং আমির মিয়া দায়ের করেন আরেকটি চাঁদাবাজির মামলা। এখন আবার নতুন করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করছে তারা।”

কয়েছ মিয়ার অভিযোগ, জামিনে বেরিয়ে আসা আসামিরা প্রায়ই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়, ইট-পাথর নিক্ষেপ করে, এমনকি দা ও কুড়াল দিয়ে তার ভাই শারীফ উদ্দিনকে মারাত্মকভাবে জখম করে। তিনি দাবি করেন, “পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই মিথ্যা মামলা রেকর্ড করছে এবং প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “গত কোরবানির ঈদের আগে আমার মা ও বোনকে পুলিশ ঘরে থাকা মাংস কাটার দা অস্ত্র হিসেবে দেখিয়ে গ্রেফতার করে। পরে আমার ছেলেকে ও জামাতাকেও ঈদের পর গ্রেফতার দেখানো হয়।”

সবশেষে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই আমাদের ওপর মিথ্যা মামলা ও হামলা চালানো হয়। আমি সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যটা বের করে আনার অনুরোধ করছি। আপনাদের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনের নিকটও বিচার চাই।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হিলালপুর এলাকায় পারিবারিক বিরোধের জেরে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এলাকাবাসীও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাতে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হয় এবং শান্তি ফিরে আসে এলাকায়।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top