নিজস্ব প্রতিনিধি:
বিচারের শেষ পর্যায়ে থাকা পলাতক নেতা শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশবিরোধী একটি নতুন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কৌশল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে বলে দাবি করছেন বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। গতকাল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স, এএফপি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত হাসিনার সাক্ষাৎকারকে তারা দিল্লির কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করা এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করা।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, জুলাইয়ের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি আরও দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে লাখ লাখ সমর্থক ভোট বর্জন করবে। পাশাপাশি ঘোষণা দেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া গঠিত সরকারের সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন না; বরং ভারতে অবস্থান করবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দিল্লির মূল লক্ষ্য হচ্ছে আদালতের রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভারসাম্যে প্রভাব ফেলা। আদালতের সম্ভাব্য রায়ের আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হাসিনার এই সাক্ষাৎকার প্রচার করে একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে তাদের মন্তব্য।
অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, দিল্লিতে শেখ হাসিনার জন্য শুধু রাজনৈতিক আশ্রয় নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক কাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সুবিধার সব ব্যবস্থাই করা হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতায় অবস্থানরত কিছু প্রভাবশালী নেতা ও অনুসারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতের এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে একটি বৃহত্তর পরিকল্পনা—যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে পুনরায় আগের মতো রাজনৈতিক প্রভাব ফিরিয়ে আনতে চায়। তবে সরকারের পরিবর্তন ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের ফলে দিল্লির সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সরকারি ও কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করায় ভারতের এই কৌশল সফল হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একই বার্তা ঘন ঘন প্রচারিত হলে তা জনমত প্রভাবিত করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা রয়েছে।
অন্যদিকে কূটনৈতিক মহল মনে করছে, আদালতের রায় প্রকাশের পর দেশীয় রাজনীতিতে নতুন ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। তাই বিশ্লেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন—আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রেক্ষাপটে তথ্যনির্ভর কূটনীতি ও জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা এখন সময়ের দাবি।