৩১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

গুরুদাসপুরে সরকারি প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

মোঃ নাঈম ইসলাম, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি:

নানা অনিয়ম ও শিষ্টাচার বহিভূত আচরণের কারণে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গত (২৮ অক্টোবর) মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে বিদ্যালয়ে মাঠে এই মানববন্ধন হয়।

ভুক্তভোগীর আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ইউনূসকে অন্যত্র বদলির দাবিতে সমবেত হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিম, মারুফ, সোনিয়া ও অভিভাবক, মুঞ্জুরুল ইসলাম সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক অভিভাবক।

বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ক্লাস ঠিকমতো হয় না। প্রধান শিক্ষকও ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসে না। ক্লাস বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট জানতে চাইলে রেগে গিয়ে করেন খারাপ আচরণ। তিনি শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই সবাই তাকে দেখে ভয় পান। তিনি পাঠদানে কখনও কখনও রেগে গিয়ে মারধর করেন। আমরা অবিলম্বে এমন প্রধান শিক্ষককে এখান থেকে অন্যত্র বদলির দাবি জানাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা বলেন, চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলার একটি অবহেলিত বিদ্যালয়। ১৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে তিন জন শিক্ষক দিয়ে চলে পাঠদান, যেন দেখার কেউ নেই। বর্তমানে এখানে তিন জন শিক্ষক থাকলেও দুই শিক্ষক দিয়ে চলে পাঠদান। প্রধান শিক্ষক নিজ এলাকার হওয়ায় তিনি নিজ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ঠিকমতো বিদ্যালয়ে তাঁকে পাওয়া যায় না। আমাদের সন্তানরা বিদ্যালয়ে যেতে চান না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সন্তানরা বলে ‘মা ক্লাস হয় না’। সন্তানদের অনীহার খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। অবিলম্বে বিদ্যালয়টি বাঁচাতে এমন প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র অপসারন এবং আরো শিক্ষক অর্ন্তভুক্তের দাবি জানান তাঁরা।
এদিকে ২৭ অক্টোবর পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে মারধর করায় প্রধান শিক্ষকের নামে গুরুদাসপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগ দায়ের করেছেন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিমের বাবা মুঞ্জুরুল কাজী। অপরদিকে থানায় শিক্ষার্থীর বাবার নামে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইউনূস আলী। শিক্ষার্থীর তানিমের বাবা মুঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিম আমার ছেলে। সে অফিস কক্ষে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে ইংরেজী ক্লাশ নেওয়ার কথা বললে রেগে গিয়ে দুই কানে চড় মারে। সে ঘটনাস্থলে চিৎকার করে কান্নাকাটি করলে তাঁকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে প্রধান শিক্ষক। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি ছেলে অবস্থা খারাপ।
পরে তাকে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করি। ছেলের মুখে বিস্তারিত শুনে প্রধান শিক্ষকের বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, প্রধান শিক্ষক ইউনূস আলী বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার নামে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। প্রকৃত ঘটনার সত্যতা তদন্ত সাপেক্ষে উন্মোচন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জোনাব আলী বলেন, প্রধান শিক্ষকের নামে থানায় অভিযোগ ও বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন হয়েছে এবিষয়ে আমি শুনেছি। তবে আমাকে কেউ অবগত করে নাই। তদন্ত চলছে। অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো.দুলাল হোসেন বলেন, থানায় চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নামে ও এক অভিভাবকের নামে পাল্টাপাল্টি দুইটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফেসবুকে আমরা

মন্তব্য করুন

guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সর্বাাধিক পঠিত নিউজ

Scroll to Top