নিজস্ব প্রতিনিধি:
অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবায় আর্থিক জালিয়াতি সনাক্ত, মোবাইল চুরি রোধ ও সরকারের রাজস্ব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে দেশে চালু হচ্ছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (NEIR)। এই সিস্টেম চালুর মাধ্যমে কেবল অনুমোদিত, মানসম্মত ও বৈধভাবে আমদানিকৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটই নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা যাবে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকারের বিভিন্ন ডাটাবেজে তথ্যের গরমিলের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ২০২৪ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতি অবৈধ ডিভাইস ও সিম থেকে সংঘটিত হয়, যা এনইআইআর চালুর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ হ্যান্ডসেটের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এনইআইআর চালু হলে এটি শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গ্রাহক সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.) বলেন, এনইআইআর চালু হলে হ্যান্ডসেট ও সিম সহজেই সনাক্ত করা যাবে। বর্তমানে দেশে ৩৮ শতাংশ মানুষ ফিচার ফোন ব্যবহার করছেন, তাই স্মার্টফোন ব্যবহারের হার বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চোরাই ও রিফাবরিসড হ্যান্ডসেট বাজারে থাকার কারণে মোবাইল ফোনের দাম কমছে না। এনইআইআর চালু হলে দেশীয় ১৮টি হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলক দামে ফোন বিক্রি করতে পারবে।
স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক এনইআইআর পরিচালনার বিস্তারিত উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, নতুন ফোনগুলো নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে সচল থাকবে, কিন্তু এনইআইআর সিস্টেমে যাচাই শেষে বৈধ হলে তা স্থায়ীভাবে সক্রিয় থাকবে। অবৈধ হ্যান্ডসেটের ব্যবহারকারীদের এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে এবং এক মাস পর সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। বিদেশ থেকে বৈধভাবে ক্রয়কৃত বা উপহারপ্রাপ্ত ফোনগুলো বিশেষ নিবন্ধনের মাধ্যমে সচল রাখা যাবে।
এনইআইআর বাস্তবায়নে সহযোগিতা চেয়ে বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানান মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (MIOB) সভাপতি জাকারিয়া শহীদ। তিনি বলেন, দেশীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারীরা ভবিষ্যতে বিদেশেও ফোন রপ্তানির সুযোগ পাবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর্স অব বাংলাদেশের (AMTOB) মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, এনইআইআর বাস্তবায়নে সব মোবাইল অপারেটর একসঙ্গে কাজ করছে। জনসচেতনতা তৈরিতে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মাহমুদ হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে এনইআইআর সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে তাদের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিটিআরসির কমিশনারবৃন্দ, মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (MIOB), অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর্স অব বাংলাদেশ (AMTOB) এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
 
								 
								 
								 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
															 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        